কক্সবাজার প্রতিনিধি »
রেস্টুরেন্ট ও খামারির বেশে চলা এক ইয়াবা কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১৫)। গত ২৩ এপ্রিল উখিয়ার বালুখালী চেকপোস্ট এলাকায় তাকে আটকের পর মোটরসাইকেল বহনকরা ব্যাগে ইয়াবা পান অভিযানকারিরা। এ ঘটনায় মামলা করে তাকে উখিয়া থানায় সোপর্দের পর কারাগারে পাঠানো হয়। এলাকায় তার অনুপস্থিতির কারণে ধীরে ধীরে তার কারান্তরিণে তথ্যটি বেরিয়ে এসে ব্যবসায়ীর মুখোশে ইয়াবা কারবারের বিষয়টিও প্রকাশ পেয়েছে। বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তার অভিনব কৌশলের আদ্যেপান্ত।
গ্রেফতার ছদ্মবেশী মাদক কারবারী আব্দুল গফুর (৩৮) কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া বাজারপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে। এলাকায় পৃথক নামে তার রেস্টুরেন্ট ও পোল্ট্রি ব্যবসা রয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে একজন কারবারী মাদকের একটি বড় চালান ঘুমধুম হয়ে উখিয়া দিয়ে লিংকরোড এলাকায় হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। এ খবরের ভিত্তিতে র্যাব-১৫ এর একটি দল গত ২৩ এপ্রিল উখিয়া বালুখালী চেকপোষ্ট এলাকায় অবস্থান নেয়। সেখান থেকে আব্দুল গফুরকে আটক করা হয়। এ সময় তার সাথে থাকা মোটরসাইকেলে বহনযোগ্য ব্যাগের ভেতর বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে আনা ইয়াবার কথা স্বীকার করে। পরে ব্যাগের অংশ কেটে তার ভেতর থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উখিয়া থানার এসআই নুর আলম বলেন, গত ২৩ এপ্রিল র্যাব ১০ হাজার ইয়াবাসহ আব্দুল গফুর নামে একজনকে থানায় সোর্পদ করেছে। তার সিন্ডিকেটে আর কে কে আছে সেই তদন্ত চলছে। সম্পৃক্ততা পেলে তাদেরকেও ওই মামলায় আসামী করা হবে। বিস্তারিত পরে জানা যাবে।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র মতে, টেকনাফ থেকে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে গফুর এবং তার সিন্ডিকেট মহাসড়ক ব্যবহার করতো না। তারা গ্রামের রাস্তা ও নদী পথ ধরে ৫ থেকে ৭ দিন সময় ব্যয় করে ঢাকায় পৌঁছাতো। সেই ধারাবাহিকতায় বাইকার সেজে গফুর টেকনাফ হয়ে কক্সবাজার আসছিলো। এবং ১০ হাজার ইয়াবা নিয়ে শৃঙ্খলা বাহিনীর জালে আটকেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে গফুরের সিন্ডিকেট মহাসড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প হিসেবে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ইজি বাইক, সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহার করে পথ পাড়ি দিতো। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাবার ক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী-মানিকছড়ি গুইমারা-রামগড় হয়ে ফেনী পৌঁছাতো। সেখান থেকে নোয়াখালীর চৌমুহনী-সোনাইমুড়ি এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ হয়ে মতলব লঞ্চঘাট পর্যন্ত যেতো। পরে সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়ে মুন্সিগঞ্জ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতো। এতে করে ঢাকায় একটা চালান পৌঁছাতে ৪/৫ দিন লেগে যেতো তাদের। সাধারণ মানুষের সন্দেহ দূর করতে নিজেদের ভ্রমনকারি হিসেবে প্রচার করতো তারা। এ কারণে এতদিন অধরাই ছিল গফুর সিন্ডিকেট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী সূত্র জানায়, গফুরের অবস্থান খরুলিয়া বাজারপাড়া হলেও তার মুল সিন্ডিকেট নয়াপাড়া এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে পোল্ট্রিফার্মের ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা কারবার করার তথ্য ফাঁস হলে পরিবারসহ বাজারপাড়ায় চলে আসেন গফুর। নয়াপাড়া এলাকায় সুবিধাভোগী এক সমাজপতির পৃষ্টপোষকতায় এ ব্যবসা নির্বিঘ্ন করেন তিনি। গফুর প্রায় সময় এলাকার বাইরে থাকেন। মাঝে মাঝে এলাকায় এসে ইয়াবার চালান সিন্ডিকেটের হাতে দিয়ে যান এবং ওই পৃষ্ঠপোষকের সহায়তায় তার যোগান মতো সরবরাহ চলে। গত ২৩ এপ্রিল র্যাবের হাতে তিনি আটকের বিষয়টি প্রচার পাবার পর সিন্ডিকেটের সদস্যরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। আর পৃষ্ঠপোষকসহ স্বজনরা জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে দৌঁড়ানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
নয়াপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট অনেক বড়। আমাদের নাম প্রকাশ পেলে পরিবারের উপর আঘাত আসতে পারে। শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যদের সাথে তাদের যোগাযোগ নিবিড়। ফলে সিন্ডিকেট সদস্যদের উৎপাতে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। সমাজ সর্দার যখন পৃষ্ঠপোষক হন তখন সমাজের অন্যরা চাইলেও কোন কিছু করতে ব্যর্থ হন। ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয়ে আসারা রাস্তা ও গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে স্কুলগামীদের ইভ টিজিং করলেও টুঁশব্দ করা মুশকিল।
খরুলিয়া নয়াপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি নাজির হোসাইন বলেন, খামারী ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী গফুর ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছে জানি। সে আমার খালাত ভাই, আমি সমাজ সর্দার তাই অনেকে মনে করে তাকে আমি পৃষ্ঠপোষকতা করি। আমি মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি সবসময়।
ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, এলাকার অনেকের নামে ইয়াবা কারবারের অভিযোগ আছে। আমরা শৃংখলাবাহিনীকে সেসব তথ্য সরবরাহ করেছি। প্রশাসন চাইলে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে অভিযানে সহযোগীতা করবো। তবে, গফুরের গ্রেফতারের বিষয়টি বিভিন্ন জায়গায় প্রচার পেলেও সঠিক জানেন না বলে উল্লেখ করেন চেয়ারম্যান।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, বেশ কয়েকবার খরুলিয়ায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু আগেভাগেই তারা অভিযানের খবর পেয়ে যায়। এরপরও তদারকি চলছে। উর্ধতনদের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনে যৌথ অভিযান চালানো হবে।













