কর্ণফুলীতে গলা কেটে রিকশা চালক খুনের ঘটনা ৫৯ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি থানা পুলিশ। অপরদিকে, পুলিশ পরিচয়ে জুলধা ইউনিয়নে ডাকাতির ঘটনার ২৫ দিনেও ক্লুলেস হিসেবে পড়ে রয়েছে।
যদিও সিএমপি কর্ণফুলী থানার পুলিশ পরিদর্শক ওসি তদন্ত মেহেদী হাসান বলছেন, পুলিশ দুই ঘটনায় বসে নেই। পুলিশি কার্যক্রম চালাচ্ছেন। পাশাপাশি ছায়া তদন্ত হিসেবেও অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুটি ঘটনায় কাজ করছেন। আশা করি শিগগিরই অপরাধীরা ধরা পড়বে।
তবে নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র বলছে, ঘটনার পর থেকেই গলা কেটে রিকশা চালক খুনের মামলা দায়েরকারী বাদি নিহতের মা এলাকা ছাড়া। একবার দোহাজারী ও আরেকবার নগরীতে বসবাস করছেন বলে তিনিই জানান।
ওদিকে, পুলিশ পরিচয়ে কর্ণফুলীর জুলধা ইউনিয়নের মো. নাজেম এর বাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় আনোয়ারার নুর মোহাম্মদ (৫৫) নামক এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুই দিনের রিমান্ডে নিলেও কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেনি বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আবু সাঈদ রানা জানান।
অথচ ডাকাতির ঘটনায় সন্দেহজনক ব্যক্তি এলাকা ছাড়া। নাম তার নুরুন্নবী। সে ভিকটিম নাজেমের ভাগিনা হন। মূলত ডাকাতের ঘটনায় তিনি জড়িত বলে এলাকার অনেকেই সন্দেহ করছেন। কারণ ঘটনার সময় তার গতিবিধি ছিলো রহস্যজনক। নগরে অটোরিকশা চালালেও ঘটনার সময় তিনি এলাকায় ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জানুয়ারি ভোর রাতে চরলক্ষ্যার তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান সড়কের পাশের ধান ক্ষেতের জমিতে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা চালক মো. আজিবুল ইসলাম আরিফ (১৮) খুন করে দুর্বৃত্তরা।
এ খুনের পর খুনিদের শনাক্তে পুলিশ ঘটনার আশেপাশ কর্ণফুলীর পুরাতন ব্রিজঘাট ও চরপাথরঘাটার অর্ধশতাধিক সিটিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি স্বয়ং কর্ণফুলী থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় ভিকটিম আরিফের মা শাফিয়া বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি রেখে সিএমপির কর্ণফুলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার জিআর মামলা নং-১৭।
আরিফ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কর্ণফুলী থানার এস আই আবুল কালাম বলেন, ‘ঘটনার পরপরেই ৫০টিরও অধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হলেও স্পষ্টত কোন তথ্য মেলেনি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ ও রিকশায় কিছু চিহ্ন রয়েছে। যা চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।’
অন্যদিকে, গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কর্ণফুলীর জুলধা ইউনিয়নের মো. নাজেম (৪৮) এর একতলা বাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এতে ডাকাতেরা পরিবারের সবাইকে হাত পা বেঁধে রুমে আটকে রেখে প্রায় ৩ ভরি স্বর্ণ, দুই লক্ষ নগদ টাকা, দুটি মোবাইল ফোনসহ কাপড় চোপড় লুট করে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় বাড়ির মালিক মো. নাজেম বাদি হয়ে ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামি করে মামলা করেন। যার জিআর মামলা নং-২৭। বাদি নাজেম বলেন, ‘পুলিশ পরিচয়ে তার বাড়িতে ডাকাতি করা হয়েছে। ডাকাতরা সব ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। সবার হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিলো। সবার মুখে মাস্ক, হাফ প্যান্ট, গায়ে হাফ হাতা গেঞ্জি, পায়ে ও হাতে মোজা। মাথায় পাগড়ির মত গামছা বাঁধা ছিল।’
ডাকাতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আবু সাঈদ রানা বলেন, বসত বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় এখনো পর্যন্ত বলার মতো কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। রিমান্ডেও তেমন কিছু নেই। তবে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
কর্ণফুলী থানার ইনভেস্টিগেশন অফিসার (ওসি তদন্ত) মেহেদী হাসান বলেন, ‘যদিও দুই ঘটনায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি এখনো হয়নি। তবে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছেন। আশা করি শিগগিরই খুনিরা ও ডাকাত দলের সদস্যরা ধরা পড়বেই।’
সিএমপি বন্দর জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা জানান,’পুলিশ খুব সূক্ষ্মভাবে এ হত্যা মামলার তদন্ত চালাচ্ছে। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা খতিয়ে দেখতে একাধিক টিম বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে তদন্তের কাজ করছে। ইতিমধ্যে আমরা অনেক তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি; সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। খুনের রহস্য উদঘাটন হবেই আর খুনিরাও ধরা পড়বে। আর ডাকাতির ঘটনার ও কাজ চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন তথ্য নেই বলার মতো।’