চট্টগ্রামে গভীর রাতে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলমের চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাসায় অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গণমাধ্যমকর্মীদেরকে এতো বড় অভিযানের বিষয়টি জানানো হয়নি। চুপিসারে এমন অভিযান পরিচালনা করে খালি হাতে ফিরে যাওয়ার ফলে নানান উদ্বেক জন্ম নিয়েছে জনমনে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে আবাসিকের ১৭৫/১৭৬ নম্বর জামিলাস কটেজ নামে বাসাটিতে বিপুল সংখ্যক র্যাবের কর্মকর্তাদের আসতে দেখা যায়। এরপর অভিযান শুরু করে ।
রাত ৩টার দিকে শেষ হয় এই অভিযান। বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ এস আলমের পার্শ্ববর্তী এ বাসাটিতে অভিযানকালে দুদকের একাধিক টিমকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। ইতোমধ্যে অভিযানের একটি ভিডিও এসেছে বাংলাধারার কাছে। যেখানে দেখা যায় ঘটনাস্থলে স্থানীয় থানা পুলিশের কেউই নেই।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।চট্টগ্রামের অন্যতম এই শিল্পপতি মাহবুবুলের বাসাটিতে বিপুল সংখ্যক বৈদেশিক এবং দেশীয় মুদ্রা মজুত ছিল। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বানচাল করতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের তত্ত্বাবধানে এগুলো মজুত করা হয়েছিল। যদিও প্রায় ৩ ঘণ্টা অভিযান শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাসাটিতে ওইরকম কিছুই পাওয়া যায়নি। যদিও নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৩ ঘণ্টার অভিযান নিষ্ফল হওয়ায় নানান প্রশ্নের উদ্রেক দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, একসময় চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহবুবুল আলম। চট্টগ্রামের বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন এ ব্যবসায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিপুল টাকা খরচ করেন। সবশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেল ও শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা মাহবুবুল টাকাগুলো মজুত করেছিলেন। আন্দোলন বানচালে তারা বিপুল সংখ্যক টাকা খরচও করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে পুরো অভিযানের সময় বিপুল সংখ্যক র্যাব ও দুদকের সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও বাসাটির ভেতরে প্রবেশ করেন কয়েকজন কর্মকর্তা। বাইরে থেকে র্যাবের ফোর্স বাসাটি ঘিরে রাখেন। রাত ৩টার দিকে যখন অভিযান শেষ তখন র্যাব ও দুদকের একাধিক কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে থাকা কিছু গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্ন করতে দেখা যায় অভিযানের বিষয়ে। তারা অভিযানে তেমন কিছু পায়নি উল্লেখ করে গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে যান।
ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা মূল্যের দেশি-বিদেশি মুদ্রা মজুত ছিল বাসাটিতে। কয়েকদিন ধরে দুদক, পুলিশ ও র্যাব অভিযানের বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
অভিযানের আগে কয়েকদিন ধরে একাধিক সংস্থার কর্মকর্তারা বাসাটি নজরদারিতে রেখেছিলেন।
যে বাসাটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে সেটির পেছনেও দরজা রয়েছে। যেখান দিয়ে টাকা সরানোর সুযোগ রয়েছে। এরকম কিছু দেখেছেন কি-না জানতে চাইলে তারা বলেন, অভিযানে থাকা র্যাব ও দুদকের কর্মকর্তারা তাদের বাসাটির পেছনের দিকে যেতে দেননি।
জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, অভিযানের বিষয়ে আমারা জানিনা। তবে আমাদের না জানিয়ে দুদক এবং র্যাব সুনির্দিষ্ট অভিযোগে নিজেদের মতো করে অভিযান পরিচালনা করতে পারে। তবে সোমবার রাতে দুদক ও র্যাবের অভিযান শুরুর পর বিষয়টি আমরা শুনেছি।
গত ৯ সেপ্টেম্বর মাহবুবুল আলম এফবিসিসিআই সভাপতি থেকে পদত্যাগ করেন। ওইসময় সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাহবুবুল ই-মেইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের ডিটিও বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। এর আগে, গত বছরের ১৪ আগস্ট ২০২৩-২৫ মেয়াদে এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন মাহবুবুল আলম। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা মাহবুবুল আলম ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হন ১৯৮৩ সালে। গত প্রায় চার দশকে কমোডিটি ট্রেডিং থেকে শুরু করে ব্যাংক ও আর্থিক পরিষেবা, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন তিনি।













