৭ নভেম্বর ২০২৫

গরমেও লোকারণ্য কক্সবাজার

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

ঈদের প্রথম দুদিন পর্যটক সমাগম কম হলেও তৃতীয় দিন সোমবার হতে লোকারণ্য হয়ে আছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। বিকেল নাগাদ পর্যটক-দর্শনার্থী মিলে লাখো ভ্রমণপ্রেমীর উপস্থিতি হচ্ছে বেলাভূমিতে। সৈকতের পাশাপাশি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, ইনানী, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া ও মহেশখালীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে। এতে চাঙ্গাভাব ফিরেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। আগামী রবিবার (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত কক্সবাজারে লোক সমাগম এমনটি থাকবে, এ আশা ব্যবসায়ীদের।

ঈদের ছুটিসহ পরবর্তী রবিবার পর্যন্ত সৈকত ভ্রমণে অন্তত ৫-৬ লাখ পর্যটক উপস্থিতি হবে উল্লেখ করে, কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ঈদের ছুটি ও পরবর্তী সময়ে গরম উপেক্ষা করে লাখো পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে। হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউসগুলো শতভাগ বুকিং না হলেও সন্তোষজনক ব্যবসা হচ্ছে সবার। একই ভাবে বেচাবিক্রি বেড়েছে রেস্তুরা, কুলিং কর্ণারসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। রোজা শেষে পর্যটক বরণের সব প্রস্তুতি আগেই নেয়া ছিল। শবেকদর হতে টানা ছুটি পড়লেও ঈদের পরদিন হতেই পর্যটক আসা শুরু হয় কক্সবাজারে। প্রতিদিন অর্ধলাখের মতো পর্যটক অবস্থান করছেন। আগামী শনিবার পর্যন্ত ভ্রমণপিয়াসীদের এ অবস্থান থাকতে পারে।

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, যেভাবে আশা করেছিলাম তেমনটি হয়নি। এরপরও এত গরম উপেক্ষা করে উল্লেখ করার মতো পর্যটক আমাদের আথিতেয়তা নিচ্ছেন। ঈদ বিনোদন হিসেবে শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) রাতে আমাদের অতিথিদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি। এ উপলক্ষ্যে সাশ্রয়ী প্যাকেজ ঘোষণা করা আছে। গরম উপেক্ষা করে পর্যটকের পাশাপাশি দর্শনার্থী সমাগম আশানুরূপ হচ্ছে।

লেগুনা বিচ হোটেলের পরিচালক মুহাম্মদ রিদুয়ানুল হক বলেন, গরমেও ব্যবসা ভালোই জমছে। কিন্তু কক্সবাজার থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হচ্ছে সেভাবে পর্যটনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নেই।

সরেজমিন দেখা যায়, সকাল-দুপুর ও সন্ধ্যা সৈকতের সুগন্ধা-লাবণী পয়েন্টসহ সব পয়েন্টে পর্যটক ও দর্শণার্থীর ভীড়। উত্তাল সাগরের ঢেউ উপেক্ষা করে পানিতে নেমে গোসল করছেন অনেক পর্যটক। বৈরী আবহাওয়ায় সমুদ্র উত্তাল। টানা দাবদাহ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও বৃষ্টির দেখা নেই। পর্যটকরা আনন্দ করছে বিচ বাইক ও ঘোড়ার পিঠে চড়ে।

গোসলরত পর্যটকদের মাঝে বিপদাপন্ন হওয়াদের উদ্ধারে কাজ করা সী-সেইফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার মুহাম্মদ ওসমান বলেন, বিপুলসংখ্যক পর্যটক সামাল দিয়ে স্বল্পসংখ্যক লাইফগার্ড কর্মীকে হিমশিম খেতে হয়। সাগরে নামা পর্যটকদের পর্যবেক্ষণে পৃথক চারটি টাওয়ার থেকে এবং পানিতে দাঁড়িয়ে নজরদারি করে আমাদের কর্মীরা। প্রতিদিন প্রায় দুই ডজনের অধিক কর্মী বেলাভূমিতে থাকে।

সিলেট থেকে আগত পর্যটক মাহবুব বলেন, ঈদ উদযাপন করে বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার এসেছি। টেলিভিশন ও ইউটিউভে দেখা কক্সবাজারের চেয়ে বাস্তব কক্সবাজারের পরিবেশ আরো মনোরম। খুবই ভাল লাগছে।

নারায়নগঞ্জের ব্যবসায়ী কবির হোসেন (৪৭) বলেন, পরিবার নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। সমুদ্রে নেমে বেশিক্ষণ থাকা যায়নি। ঢেউয়ের উচ্চতা বেশি, বৃহস্পতি ও মঙ্গলবার দু’জন পর্যটক মারা গেছে জানতে পেরে ভয় জেগেছে। তাই দশ-পনের মিনিট পর ওঠে এলাম। বাড়ির অনেকে সাঁতার জানে না।

জেলা সদরের বাইরেও হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার সব পর্যটন স্পটে জনসমাগম হচ্ছে।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের তত্বাবধায়ক (ইনচার্জ) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিন স্থানীয় প্রকৃতিপ্রেমীরা পার্কে এসেছেন। এখন প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা হতে আসছে দর্শনার্থী। আগের চেয়ে পার্কের আধুনিকায়ন হওয়ায় আনন্দ নিয়ে পর্যটকরা বিনোদিত হচ্ছে। যেকোন দিবস, ঈদ-পার্বণে এখানে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার সমাগম লক্ষ্যনীয়।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, বৈশাখের দাবদাহ এখনো বিদ্যমান। তা উপেক্ষা করে কক্সবাজারে উল্লেখ করার মতো পর্যটক আগমণ ঘটছে। ঈদের পর হতে আগামী রবিবার পর্যন্ত এ সমাগম থাকবে বলে আশা আমাদের। এতে পর্যটন অনুষঙ্গ সকল সেক্টর মিলে সাড়ে ৩-৪ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা রাখছি।

কক্সবাজার ট্যুরিষ্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, ঈদের পরদিন হতে পর্যটক ও দর্শনার্থী আগমণ বড়েছে। বেলাভূমিসহ সকল পর্যটন স্পটে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে একাধিক ভাগে দায়িত্বপালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে একই ভাবে দায়িত্বপালন করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, ঈদের পর হতে স্থানীয়দের পাশাপাশি দুর-দুরান্ত থেকে নানা বয়সের পর্যটকের পদচারণা বড়েছে বেলাভূমি ও কক্সবাজারের সর্বত্র। সবার বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম টহলে রয়েছে। পুলিশ-র‌্যাবসহ সাদা পোশাকের শৃংখলা বাহিনীও স্ব স্ব উদ্যোগে টহল অব্যাহত রেখেছে। ভ্রমণপ্রেমীদের নির্মল আনন্দ নিশ্চিত করতে আমরা সর্বদা সচেষ্ট।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ