চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে মো. আরিফুল ইসলাম প্রকাশ মাহিন (২৭) নামে এক ব্যবসায়ীকে গলায় ছুরি ধরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে কর্ণফুলী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী ভুক্তভোগী মাহিন নিজেই। মামলা নং-৩৯। শুক্রবার (২৮ মার্চ) তিনি এজাহার দাখিল করেন।
গত বুধবার (২৬ মার্চ) রাত ৯টার দিকে উপজেলার চরলক্ষ্যার চরফরিদ সিডিএ আবাসিকের গরু বাজারের দক্ষিণ পাশে এ ঘটনা ঘটে।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, ঘটনার দিন রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে মাহিন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেলে শহরের উদ্দেশে রওনা দেন। পথে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি সিগন্যাল দিলে মাহিন সরল বিশ্বাসে তার মোটরসাইকেল থামান। ওই ব্যক্তি তাকে একটু সামনে নামিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি তাকে পেছনে বসতে দেন। কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে মোটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নেয় এবং তাকে জোরপূর্বক মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে ফেলে।
ছিনতাইয়ের কৌশল ও লুটপাট
এরপর দুইজন মিলে তাকে আবাসিক এলাকার নির্জন একটি স্থানে নিয়ে যায়, যেখানে আরও দুইজন আগে থেকেই অবস্থান করছিল। চারজন মিলে গলায় ছুরি ধরে তার কাছে থাকা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের মোটরসাইকেল, ১৭ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন, নগদ ১২ হাজার ৫০০ টাকা, বিকাশ অ্যাকাউন্টে থাকা ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ইসলামি ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ব্যাংকের এটিএম কার্ড কেড়ে নেয়। এরপর তারা ব্যাংকের কার্ড থেকে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা তুলে নেয়।
নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইল
ভুক্তভোগী মাহিন জানান, ছিনতাইকারীরা শুধু লুটপাট করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাকে ভয় দেখিয়ে একাধিক ভিডিও ধারণ করে। তারা তাকে দিয়ে বলানো হয় যে তিনি ইয়াবা বিক্রি করেন, টাকা ধার নিয়েছেন কিন্তু ফেরত দেননি, এমনকি এক নারীর সঙ্গে আবাসিক হোটেলে আটক হয়েছেন। এভাবে তারা পরিকল্পিতভাবে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে।
তিনি আরও জানান, ভুল পিন নম্বর দেওয়ার কারণে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। নিরুপায় হয়ে তিনি ছিনতাইকারীদের সঠিক তথ্য দেন। এরপরও তারা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। আশেপাশের লোকজন থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
পালানোর চেষ্টা ও পরিবারের সহায়তা
দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার পর মাহিন সুযোগ পেয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন এবং ছিনতাইকারীরা তাকে পুনরায় ধরে ফেলে। পরে রাত ২টার দিকে এক ছিনতাইকারী তাকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় তুলে মইজ্জ্যারটেক এলাকায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে এক সিএনজি চালক তার অবস্থা দেখে সন্দেহ করেন এবং মাহিনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
পরে মাহিন আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন এবং রাতেই কর্ণফুলী থানায় মৌখিকভাবে অভিযোগ জানান।
পুলিশ ও পরিবারের প্রতিক্রিয়া
ভুক্তভোগী মাহিন বলেন, ‘আমি ছিনতাইকারীদের হাতে সর্বস্ব হারিয়েছি। থানায় মামলা করেছি। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি, সব শেষ আমার!’
মাহিনের মামা শায়ের মাওলানা মুহাম্মদ এনামুল হক এনাম বলেন, ‘মাহিন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে। আমি আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যাই এবং সঙ্গে সঙ্গেই থানায় জানাই। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে অপরাধীরা ধরা পড়বে।’
এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।’
ঘটনাটি সাধারণ ছিনতাই নাকি পরিকল্পিত অপহরণ?
বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণ ছিনতাইকারীরা সাধারণত দ্রুত টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা, পরিকল্পিত ভিডিও ধারণ, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া এবং ব্যাংকের টাকা উত্তোলন করার বিষয়টি অস্বাভাবিক। এটি কেবল ছিনতাই নয়, বরং পরিকল্পিত অপহরণ ও ব্ল্যাকমেইলের ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে।
পুলিশের উচিত দ্রুত ব্যাংক এটিএম বুথের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা এবং ছিনতাইকারীদের গতিবিধি পর্যালোচনা করা। অন্যদিকে, যদি এটি সাজানো ঘটনা হয়, তাহলে মাহিন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এমন গল্প প্রচার করছেন কি না, তাও তদন্ত করে দেখা জরুরি।