১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

গাছে গাছে থোকায় থোকায় পাকা খেজুর

বিশেষ প্রতিবেদক »

দেশীয় খেজুর পাকতে শুরু করেছে। গাছে গাছে থোকায় থোকায় খেজুর। বৃষ্টির ছোঁয়া পাওয়ায় খেজুর পাকতে আবারও সময় নিচ্ছে। শীতের শেষে খেজুর ধরতে শুরু করে। দেশীয় এসব খেজুর পাকতে প্রায় চারমাস সময় লেগে যায়। সমুদ্র উপকূল ঘিরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে মীরসরাই পর্যন্ত এ বেড়িবাঁধের খানিকটা অংশে রয়েছে শত শত খেজুর গাছের সারি।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলাধীন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ জমাদারপাড়া এলাকা সংলগ্ন বেড়িবাঁধে এখন পাওয়া যাচ্ছে থোকায় থোকায় পাকা খেজুর। হত দরিদ্র শ্রেণির শিশুরা গাছের নিচ থেকে পাকা খেজুর কুড়িয়ে নিয়ে পর্যটকদের মাঝে বিক্রি করছে। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত থেকে পায়ে হাঁটার পথ বেড়িবাঁধ। ফলে পর্যটকরা হাঁটতে হাঁটতে চলে আসেন এই এলাকায়। এটি চট্টগ্রামে একমাত্র স্থান যেখানে শত শত খেজুর গাছের সারি।

প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধে গাড়ি চলার সুযোগ না থাকলেও বেড়িবাঁধের পাশে গাড়ি রেখে অনেকেই হাঁটতে শুরু করেন খেজুর বাগান দেখার উদ্দেশ্যে। তবে বেড়িবাঁধের পশ্চিম প্রান্ত থেকে স্পীড বোটে যেমন সন্দ্বীপ যাওয়া যায়, তেমনি পণ্যবাহী ইঞ্জিন বোটও এ আঙিনায় নোঙর করা যায়। স্থানীয়রা ডিঙি নৌকায় সমুদ্রের ধারে ধারে ছোট মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে। বিভিন্নভাবে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার পরিবহণ ব্যবহৃত হলেও বেড়িবাঁধের ওপর চলাচলের কোন সুযোগ নেই। কারণ, বেড়িবাঁধের এ এলাকাটি এখনও অনুন্নত রয়ে গেছে। ফলে বেড়িবাঁধের ওপর ও পাশে খেজুর গাছের সারি। বেড়িবাঁধের দুদিক তাকালেই কিলোমিটারের পর কিলোমিটার খেজুর গাছ ছাড়া অন্য গাছ চোখে পড়বে না।

পর্যটকদের আনাগোনা। ছবি : বাংলাধারা।

পৌষের কয়েকদিন পার হতেই কাক ডাকা ভোর ঘন কুয়াশা আচ্ছন্ন হয়। ঠান্ডা পরিবেশ ঠিক তখনই গাছালিরা খেজুর গাছের ডালপালা ক্রিয়দাংশ পরিষ্কার করে রস নেয়ার জন্য ধাপ কেটে নেয়। ধাপের আকৃতি অনেকটা উল্টো ত্রিভুজের মত। তবে অনেকে এটিকে উল্টো পিরামিডও বলে।

গাছালিরা বাঁশের চুঙ্গি লাগিয়ে রস সংগ্রহ করে থাকে মাটির কলসিতে। তবে মৃৎ শিল্পের তৈজসপত্র কমে যাওয়ায় এখন প্লাস্টিকের কন্টেনারও ব্যবহার করা হয়। মাঘের শেষের দিকে যখন উষ্ণতা বেড়ে যায় তখন খেজুরের রস আর পাওয়া যায় না। কুয়াশা না থাকার কারণে এমনটি হয় বলে জানিয়েছেন গাছালিরা।

৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে প্রতিলিটার খেজুরের প্রকৃত রস পাওয়া যায়। তবে পানি মিশ্রন করে শহরে অসাধু ব্যবসায়ীরা ৫০ টাকায়ও প্রতি লিটার রস বিক্রি করে। শহরে যেসব খেজুরের রস আসে এর বেশিরভাগই বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ জমাদারপাড়া এলাকার।

গাছে থোকায় থোকায় পাকা খেজুর। ছবি : বাংলাধারা।

রসের সময়কাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর গাছে খেজুরের ফুল আসতে থাকে। সবুজ আকৃতির এ ফুল থেকে খেজুর ধরতে শুরু করে। তবে জমাদারপাড়া এলাকায় ছোট ছোট তথা ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার গাছেও খেজুর ধরতে দেখা যায়। অথচ, এসব গাছ থেকে মাত্র দুয়েক মৌসুম খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়েছে। এ সময়টাতে খেজুর গাছগুলো অনেকটা খেজুরের কারণেই দূর থেকে হলদে রঙের মনে হয়।

গাছালিরা বলেছেন, খেজুরের সুমিষ্টতা পেতে হলে গাছ পাকা খেজুর খাওয়াই উত্তম। এছাড়া লবণ পানিতে চুবিয়ে কয়েকঘন্টা রাখার পর খেজুরের ঝাড় ঝুলিয়ে রাখলেও তা পাকতে শুরু করে। কিন্তু এ ধরনের খেজুর ততটা সুস্বাদু নয়। তবে গাছ থেকে খেজুরের ঝাড় কাটার পর রোদে ঝুলিয়ে রাখলেও প্রতিদিন কিছু কিছু খেজুর পাকতে থাকে। এভাবে ছয় সাতদিনের মধ্যেই সব খেজুর পেকে যায় এবং তা অনেকটা গাছপাকা খেজুরের ন্যায়।

মূলত জ্যেষ্ঠের শেষ নাগাদ গাছের সব খেজুর পেকে যাওয়ার কথা থাকলেও এ এলাকার খেজুরগুলো বর্ষার মাঝামাঝি পর্যায়েও শেষ হয় না। ফলে রোদের অপেক্ষায় থাকতে হয় পাকা খেজুরের অন্বেষায়।

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ