৩ নভেম্বর ২০২৫

চকরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ; পুলিশের ভূমিকা রহস্যময়!

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

কক্সবাজারের চকরিয়ার খুটাখালীতে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি দখলে নিতে অবৈধ থাবা বসাতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে প্রতাপশালী একটি চক্র। তা রদ করতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আদালতের আশ্রয় নিয়ে ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করিয়েছে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহামদের পরিবার। গত মাসে দেয়া নিষেধাজ্ঞার নোটিশ জারির দায়িত্ব দেয়া হয় চকরিয়া থানাকে। কিন্তু অবৈধ দখল চেষ্টাকারিদের সাথে আতাত করায় দীর্ঘ মাস অতিক্রম হলেও আদালতের নোটিশটি জারি করেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল। নোটিশে বিবাদির ঠিকানা না থাকায় তা তামিল করা যায়নি বলে দায় এড়াতে চেষ্টা চালান তিনি।

তবে, এটাকে কর্তব্য গাফেলতি বলে স্বীকার করে দ্রুতই আদালতের আদেশ জারি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী।

সূত্র জানায়, চকরিয়ার খুটাখালীর কইয়াখালী এলাকায় নিজস্ব খতিয়ানের ২০ একর ঘেরের জমি চাষ ও ভোগদখল করে আসছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমদ। গত বছর তিনি মারা যাবার পর স্থানীয় কিছুু প্রভাবশালী দুর্বৃত্ত বাহিনীর কুনজর পড়ে এসব জমির উপর। এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় স্থানীয় জসিম মেম্বার নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে গত নভেম্বরে উক্ত ঘেরে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহামদের পরিবারের লোকজনকে প্রহার করে তাড়িয়ে দেয়। হামলাকারিরা এসব সরকারি খাসখতিয়ানে জমি উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের ঘের ও লবণ মাঠে না যেতে হুশিয়ারি দেয়। এরপরই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এডিএম আদালতের শরণাপন্ন হয়ে নিষেধাজ্ঞা নেয়। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও দখলদাররা জমির দখল ছাড়তে অনিহা দেখাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা ঘের এলাকায় গেলে অস্ত্র হাতে তাদের তাড়িয়ে দেয় দখলকারা।

শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, কাইয়াখালী এলাকার ওই ঘেরের জমিতে স্কেবেটরসহ কাজ করছে কয়েকজন মানুষ। স্কেবেটর চালক জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, জসিম মেম্বার তাকে কাজে এনেছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কথা তিনি কিছুই জানেন না উল্লেখ করে বলেন, জানলে আদালতের আদেশ অমান্য করে এখানে আসতেন না।

ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহাম্মদের ভাই জাফর আহমদের অভিযোগ, স্থানীয় জসিম উদ্দিন মেম্বারের নেতৃত্বে রাতের আঁধারে কইয়াখালীর তাদের ২০ একরের মৎস্যঘেরে সশস্ত্র আক্রমণ চালায় তারা। হামলাকারীরা ঘেরের বাঁধ কেটে দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাছ ভাসিয়ে দিয়েছে। এটা আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি। জসিম বাহিনী জমিতে কাজ করে তা দখলে নিতে চান। জমিটি আমাদের নামে বিএস ক্লিয়ার এবং দখলেও আছি।

তিনি আরো বলেন, তাদের দখল চেষ্টার বিষয়ে এডিএম আদালতে জসিম উদ্দিনসহ অন্য দখলচেষ্টাকারিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তা অমান্য করে জমি দখল নিতে তারা রাতের আঁধারে গিয়ে কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে প্রতিবাদ করায় মুুক্তিযোদ্ধা ফরিদের ভাতিজা শফিকুর রহমানকে হামলা করা হয়।

ভুক্তভোগীদের একজন হাসান ফারুক জানান, এসব জমি দীর্ঘদিন পৈত্রিক ওয়ারিশী মূলে ভোগদখল করে আসছি। আমার পরিবার ও চাচা, জেঠাদের নামে বিএসও রয়েছে। তারপরও প্রভাবশালী জসিম, মুজিব , আকতার কামাল, জিল্লু রহমান, আব্দুল্লাহ, আরফাত রানা, গিয়াস উদ্দিন, রাফিসহ আরো কয়েকজন মিলে আমার কাছে ৫লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় জমি দখলে নিতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে আমাদের। জমিতে আমাদের শ্রমিক দিলে তাদের মারধর করে লুটপাটের পর তাড়িয়ে দেয়। এব্যাপারে চকরিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দুর্বৃত্ত বাহিনীর দখল ও নির্যাতন হতে রেহায় পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

অভিযুক্ত মেম্বার জসিম উদ্দিন বলেন, এটা সরকারি জমি। আমরা আমাদের নামে লীজ পাওয়ার আবেদন করেছি। তাদের নামে কোন ডকুমেন্টস নেই। আমাদের নামে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, বিষয়টি অবগত হয়েছি, ঘটনা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এডিএম কোর্টের আদেশ যতদ্রুত সম্ভব তামিল করা হবে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ