দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন, শপথ নিলেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও, এবার নতুন মন্ত্রিসভার শপথ বাকি। এবার নতুন ৪০ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ৪৫ জন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীসহ ২৪ জন পূর্ণমন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী।
এই নতুন মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রাম থেকে কে কে স্থান পেতে পারেন— তা নিয়ে আলোচনা চলে আসছে নির্বাচনের আগে থেকেই, এখনো চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এবার চট্টগ্রাম থেকে আলোচনায় আছেন ৭ সংসদ সদস্য। এদের মধ্যে ৬ জন আওয়ামী লীগের, একজন জাতীয় পার্টির। এছাড়া একজনের টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আছে।
তাদের মধ্যে চট্টগ্রামের তিন নেতার তিন পুত্রও রয়েছেন মন্ত্রী হওয়ার আলোচনায়। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর জ্যেষ্ঠ সন্তান সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবারও মন্ত্রী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তিনি তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, একবার ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও গতবার ওই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কোতোয়ালী আসন থেকে পরপর দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের এবার পদোন্নতি পাওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মিরসরাই আসন থেকে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমান রুহেলও।
চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতির সোনালী অর্জন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। স্ব স্ব অবস্থান থেকে তিন নেতাই আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন। জীবনবাজি রেখে দুঃসময়েও দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। জীবদ্দশায় রাজনীতির এই তিন বটবৃক্ষ দলের স্বার্থে, দলের প্রয়োজনে ছিলেন এক, ঐক্যবদ্ধ।
চট্টগ্রামের রাজনীতির এই সূর্যসন্তানরা আজীবন দল, রাষ্ট্র ও সমাজকে দিয়ে গেছেন অকাতরে। বিনিময়ে রাজনীতি থেকে সম্মান, যশ, খ্যাতি অনেক কিছুই পেয়েছেন তারা। সেই অনেক কিছু পাওয়ার মাঝেও তাদের না পাওয়ার বেদনা আছে। তাদের মধ্যে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবনে একবারও মন্ত্রী হননি কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম দৃষ্টান্ত হলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি ১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এবং পরে ২০১৪ সালের গঠিত সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মৃত্যুর আগে জ্যেষ্ঠ সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ২০১৩ সালে গঠিত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটিতে সদস্যপদ লাভ করেন নওফেল। এরপর চট্টলবীরের জীবদ্দশায় ২০১৬ সালে নওফেল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে জায়গা করে নেন। রাজনীতিতে পুত্রের বিশাল এই প্রাপ্তি নিয়ে ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর চিরদিনের জন্য বিদায় নেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।
এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থেকে দলের মনোনয়ন দিয়ে এমপি করে আনেন নওফেলকে এবং ২০১৯ সালে গঠিত মন্ত্রীসভায় নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রী হন।
অপরদিকে চট্টগ্রামের প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জান চৌধুরী বাবুর বেলায়ও ঘটেছে অনেকটা একই ঘটনা। ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর পরপারে পাড়ি জমান আওয়ামী রাজনীতির অত্যুজ্জ্বল সম্পদ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। তাঁর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনের উপ-নির্বাচনে তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তান সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি হন। এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য করা হয় জাবেদকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বার এমপি হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী জাবেদকে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো এমপি করে জাবেদকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উপরোক্ত দুই প্রয়াত নেতা কখনো মন্ত্রীত্বের স্বাদ নিতে না পারলেও চট্টগ্রামের মিরসরাই আসন থেকে এমপি হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন বর্তমান চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি রাজনীতির মাঠে সাথে সাথে রেখে তাঁর মেজো সন্তান মাহবুব উর রহমান রুহেলকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন রুহেল। এই প্রথমবার এমপির স্বাদ নিলেন মোশাররফপুত্র রুহেল। নতুন মন্ত্রিসভায় রুহেল নাম স্থান পতে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আবারও একই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পেতে পারেন। রাউজান থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীও এবার মন্ত্রী হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন। কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলও মন্ত্রী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা) আসনে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। সেই থেকে এ পর্যন্ত টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তাঁকেও মন্ত্রী করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। টেকনোক্র্যাট কোটায় মূল্যায়ন করা হতে পারে পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন থেকে সরে আসা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামকে।
এদিকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে ওয়াসিকা আয়শা খানের। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের জ্যেষ্ঠ কন্যা, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।













