বাংলাধারা প্রতিবেদক»
চট্টগ্রাম শহরে অবশিষ্ট অবস্থায় টিকে আছে আর মাত্র দুইটি সিনেমা হল। সিনেমা প্রেমীদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ওটিটি প্লাটফর্ম। এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে সিনেমা হলের ঐতিহ্য।
বর্তমানে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অবশিষ্ট আছে ‘সুগন্ধা’ এবং ‘সিনেমা প্যালেস’ নামে দুটি সিনেমা হল। এর বাইরেও ‘সিলভার স্ক্রিন’ নামে নগরীতে একটি মাল্টিপ্লেক্স হল আছে। তবে তা সর্বসাধারণের জন্য ব্যয় সাপেক্ষ।
বর্তমানে জনসাধারণের নাগালে ‘সুগন্ধা’ ও ‘সিনেমা প্যালেস’ থাকলেও সেগুলো এখন বন্ধের পথে। যার অন্যতম কারণ দর্শকের অভাব। প্রতিটি শো’তে পর্যাপ্ত পরিমান দর্শক না থাকায় প্রতিদিনের খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন হল মালিকরা। বর্তমানে প্রতি প্রদর্শনীর জন্য খরচ হয় ৫ হাজার টাকা, সেখানে প্রতি তিনবারের প্রদর্শনী টিকিট বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৫টি।
হল মালিকদের মতে মানসম্মত সিনেমার অভাবে দর্শকরা এখন আর হলে এসে সিনেমা দেখতে আগ্রহী হয় না।

এদিকে, দিনে দিনে বাড়ছে ওটিটি প্লাটফর্মের চাহিদা। বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রের জন্যে চরকি, বঙ্গ টিভি, হই চই (ভারতীয়), আড্ডা টাইম (ভারতীয়) অন্যতম। এসব অনলাইন মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে দর্শকরা এখন খুব সহজে ঘরে বসে বা অন্যত্র বসে দেখতে পারছে মানসম্মত চলচ্চিত্র এবং ওয়েব সিরিজ।
এ প্রসঙ্গে এক সিনেমা প্রেমী সুজন বড়ুয়া বাংলাধারাকে বলেন, ‘বর্তমানে সিনেমা হলের পরিবেশ আগের তুলনায় অনেকটাই অসচ্ছ্বল। তার উপর হচ্ছে না বর্তমান প্রজন্মের সাথে মিল রেখে কোন ছবি। আর মাসে ১০০টাকা বা তার বেশি দিয়ে আমি ওটিটি’তে শত শত ছবি দেখতে পারছি, এবং সেটা ঘরে বসেই। মানসম্মত পরিবেশের কারণেই দর্শক এখন হল বিমুখী’
গত ২০ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে সিনেমা হল খোলা রাখার অনুমতি পেলেও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে চালাতে হচ্ছে হলগুলো, এমনটাই দাবী করছেন হল মালিকরা।
জানা গেছে, একটি হল পরিচলনা করতে মাসে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন। যেখানে বিদ্যুৎ খরচ, কর্মচারীর বেতন, জেনারেটর খরচ ইত্যাদি অন্তভুক্ত। ভর্তুকির কারণে লোকবল কমিয়ে দিয়েছে হল মালিকেরা। ২০ আগস্ট থেকে আজ ২৩ তারিখ পর্যন্ত নগরীর দুইটি হলে মিলে টিকিট বিক্রির সংখ্যা মাত্র ১৮টি। যেখানে দর্শকের অভাবে বাতিল হচ্ছে অনেক প্রদর্শনী। প্রতিদিন তিনটি প্রদর্শনী হবার কথা থাকলেও দর্শক অভাবে হচ্ছে একটি।

‘সুগন্ধা’ সিনেমা হলের কর্ণধার তায়েব হোসেন বাংলাধারাকে জানান, ‘প্রতি মাসে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। করোনার কারনে যে কর্মচারি গুলো আছে তাদেরও ছাটাই করতে পারছি না, কারণ তাদেরও পরিবার আছে। এতদিন হল গুলো বন্ধ ছিল। তার উপর কোন চলচ্চিত্র মুক্তি পায়নি। দর্শকরা ভালো সিনেমার অভাবে এখন আর হলে আসতে চায় না‘
তায়েব আরও বলে, ‘এক সময় হলে সিনেমা চালাতে প্রযোজকদের থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দিয়ে শর্ত কিনে নিতে হতো। তবে এখন ফ্রি তে প্রদর্শনীর জন্য বলছে। যা লাভ হয় তার অর্ধেক তাদের দেওয়া হচ্ছে।‘
করোনা মহামারীর পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশে ওটিটি প্লাটফর্মের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আসছে আরও নতুন ওটিটি মাধ্যম। মাসে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিয়ে দর্শক দেখতে পারছে বাংলা, ইংরেজী এবং ভিন্নভাষার চলচ্চিত্রসহ নাটক ও ওয়েব সিরিজ। তাই বহু সংখ্যক মানুষ ধাবিত হচ্ছে এই দিকে। এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের সিনেমা হলের ঐতিহ্য।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হল ‘আলমাস সিনেমা হল’ বন্ধের পর অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে সিনেমা হলের সেই সোনালি ঐতিহ্য। ভালো সিনেমা এবং পর্যাপ্ত দর্শক না পেলে হয়তো লায়ন, নূপুর, জলসা কিংবা আলমাসের মতো অচিরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে চট্টগ্রামের অবশিষ্ট দুটি সিনেমা হল।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













