২৫ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম : আইসিইউ শয্যার অধিকাংশ খালি, তবুও ফিরিয়ে দিচ্ছে রোগী

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি থাকা সত্বেও প্রশাসনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে রোগী ভর্তি না নিয়ে নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো পরিচালনা করে আসছে এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিকরা।

এমনকি চট্টগ্রামের এসব বেসরকারি হাসপাতালগুলোর লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি ও ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান চালিয়েও করোনা রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

করোনা রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরেও চিকিৎসা পাচ্ছে না। নানা অজুহাত দেখিয়ে তারা রোগীদের ফেরত দিচ্ছে। করোনা উপসর্গের রোগীদের তো বটেই, সাধারণ রোগীদেরও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে রোগী ও স্বজনদের চরম ভোগান্তি ও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। রোগীদের সঙ্গে চরম স্বেচ্ছাচারিতায় মেতে উঠেছে চট্টগ্রামের এইসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো। চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগী।

প্রশাসনের তথ্য অনুসারে চট্টগ্রামের ২০টি বেসরকারি হাসপাতালে ১,৫৮৮টি শয্যা, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শয্যা খালি রয়েছে। এছাড়া ১২১টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে খালি রয়েছে ৮৬টি। তবুও করোনা সন্দেহে নগরীর কোনো বেসরকারি হাসপাতাল আইসিইউ সাপোর্ট দিচ্ছে না। চিকিৎসাসেবা না পেয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ, তাদের অসন্তোষের মাত্রা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

এদিকে চট্টগ্রামে দিন দিন করোনা রোগী বেড়েই চলেছে। গতকাল রোববারও নতুন করে ২৬৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নগরে ২০৮ জন এবং জেলায় ৬১ জন। এছাড়া মারা গেছেন ৬ জন।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গঠিত কমিটি প্রতিদিন তাদের হাসপাতালে কতজন রোগী ভর্তি আছে তার তথ্য নিচ্ছে। হাসপাতালে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে কিনা তা তদারকি করছে। এত কিছুর পরও করোনা রোগীসহ সাধারণ রোগীদেরও চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম ও রোগীদের আনাগোনা চলতে দেখা গেলেও বেশ কিছু অসঙ্গতির প্রমাণ মেলে।

এর আগে নগর ছাত্রলীগ অভিযোগ তুলেছিল- কোন রোগী গেলে প্রথমেই সিট নেই বলে তাদের বিদায় করে দেয়ার চেষ্টা করে। এর মধ্যে ভিআইপি রেফারেন্সে কিছু ভর্তি নেয়। ভর্তির পরে টাকার বিশাল একটা চাপ দেয়। এছাড়াও রোগী ও তার স্বজনদের সিকিউরিটি গার্ড দ্বারা হয়রানির শিকার হতে হয় এমন অভিযোগও পাওয়া যায় তাদের পক্ষ থেকে।

এ প্রসঙ্গে নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, আসলে এখন এমন একটি সময় চলছে যেখানে সবাইকে মানবিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা মনিটরিং করে আমরা যা দেখেছি তা তুলে ধরেছি। মানবিকভাবেই এখন যেখানে সবাইকে কাজ করতে হবে, সেখানে দায়িত্ব যারা এড়িয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি প্রশাসনের কঠোর হতে হবে। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বারবার এসব অভিযোগ আসলেও কেনো এসব সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।

নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাব্বির সাকির বলেন, হাসপাতালগুলোতে করোনার জন্য আলাদা সেল গঠন করা হলেও মেক্স হাসপাতালে তেমন কোন ব্যবস্থা দেখা যায়নি। সাধারণ রোগীদের পাশে করোনা রোগীর বেড রাখাটা বিপজ্জনক। এসব ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিৎ। তিনি আরও জানান, ছাত্রলীগের চিকিৎসাসেবা মনিটরিং টিমের কাজ অব্যাহত থাকবে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বলার জন্য দুটি হাসপাতালের জিএম তালুকদার জিয়াউর রহমান শরীফ ও রঞ্জন প্রসাদ দাশগুপ্ত কাউকেই হাসপাতালে পাওয়া যায়নি সেদিন। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কারও কাছ থেকেই সাড়া পাওয়া যায়নি। দুটো হাসপাতালে কথা বলতে চাইলে এড়িয়ে গেছেন সবাই, পাওয়া যায়নি দায়িত্বশীল কাউকেই! বিলের নিয়ম কি জানতে চাইলে এই বিষয়ে মুখ খুলেনি কেউ।

ম্যাক্স হাসপাতালে শওকত নামের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখাতে আসা এক রোগী বলেন, প্রায় এক ঘন্টা ধরে বসে থাকার পর সিরিয়াল দিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। তবে যেটি খারাপ লেগেছে তা হলো এখানে প্রবেশ পথে রোগীদের জন্য তেমন সুরক্ষার ভাল কোন ব্যবস্থা নেই। যে পরিমাণ মানুষের আনাগোনা চলছে সে হিসাবে সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা দরকার।

ম্যাক্স হাসপাতালে শওকত নামের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখাতে আসা এক রোগী বলেন, প্রায় এক ঘন্টা ধরে বসে থাকার পর সিরিয়াল দিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। তবে যেটি খারাপ লেগেছে তা হলো এখানে প্রবেশ পথে রোগীদের জন্য তেমন সুরক্ষার ভাল কোন ব্যবস্থা নেই। যে পরিমাণ মানুষের আনাগোনা চলছে সে হিসাবে সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা দরকার।

পার্কভিউ হাসপাতালে আগত শফিক নামের এক রোগীর ভাই বলেন, আমার ভাইকে ভর্তি করানোর জন্য এসেছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট থেকে জানানো হয়েছে আগে টাকা পয়সার ব্যাপারে কথা বলে নিতে। এর পর রোগীকে দেখতে ডাক্তার আসবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এক গণমাধ্যমকে দেয়া বক্তব্যে বলেন, তারা সারা বছর ব্যবসা করছে। এই টাকা তো সরকারকে দেয়নি। জাতির এই জরুরি প্রয়োজনে তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদের সুরক্ষার বিষয়টি সম্পর্কে একটি প্রস্তাব আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠিয়েছি। তারা চিকিৎসক সংকটসহ নানা টালবাহানা করে করোনা রোগীর চিকিৎসার দায় এড়াতে চাচ্ছেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সিনিয়র ডেপুটি গভর্নর আমিনুল হক বাবু বলেন, করোনা পরিস্থিতি চট্টগ্রামে মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে। এ অবস্থায় চিকিৎসা এবং করোনা টেস্টে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোকেও করোনা রুগীর চিকিৎসা দিতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালের সামনে একটি করে বড় ব্যানার টানিয়ে দেয়া দরকার। যেখানে প্রাসাশন ও মনিটরিং টিমের নাম্বার দেয়া থাকবে। সেখান থেকে জনসাধারণেরা সরাসরি তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও সুবিধা হবে। একই সাথে হাসপাতাল কর্তিপক্ষকেও এগিয়ে আসতে হবে। না হলে অবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাবে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন