চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র লালদীঘী ময়দানে শুরু হয়েছে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলার ১১৬তম আসর। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে শনিবার (২৬ এপ্রিল) পর্যন্ত, যদিও উৎসবের রেশ থাকতে পারে আরও কয়েকদিন।
প্রতিবছরের মতো এবারও বলী খেলা অনুষ্ঠিত হবে আজ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় লালদীঘীর ময়দানে। এরই মধ্যে শতাধিক বলী তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন। বলী খেলার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন, এখন অপেক্ষা কেবল কুস্তির মাঠে মেধা ও শক্তির লড়াই দেখার।
এদিকে, মূল মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও দোকানিরা গত কয়েকদিন আগেই আসতে শুরু করেছেন। নগরের আন্দরকিল্লা থেকে কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত ফুটপাতে বসেছে বৈশাখী মেলার অস্থায়ী দোকানপাট। তবে সিএমপি থেকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ওই সড়কে মেলা বসানো যাবে না। এতে হতাশ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তে বিক্রি কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ কাঠের ফার্নিচার। গাজীপুর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা সিনেমা প্যালেস এলাকাজুড়ে সাজিয়েছেন তাঁদের পসরা। কে সি দে রোড ধরে এগোলে চোখে পড়ে মাটির বাসন-কোসনের পসরা। সিরামিকের বদলে এখন অনেকেই ডাইনিং টেবিল সাজাচ্ছেন দেশি মাটির পাত্র দিয়ে। শীতল পাটিরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ থেকে আগত পাটি বিক্রেতারা বলছেন, চট্টগ্রামের মানুষ বিশেষভাবে এই পাটির প্রতি আগ্রহী।
বৈশাখী মেলায় গ্রামীণ জীবনের ঘ্রাণ মেলে নানা পণ্যে। লোহার তৈরি দা, বটি, কুড়াল, কোদাল থেকে শুরু করে, ঘর সাজানোর শোপিস ও শালার ঝাড়ু, তালপাতার পাখা, মাটির ব্যাংক, রঙিন ফুলদানি—সবই পাওয়া যাচ্ছে এখানে। লালদীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসেছে গ্রামীণ খাবারের দোকান, যেখানে মিলছে হারিয়ে যাওয়া অনেক ঐতিহ্যবাহী স্বাদ। অন্যদিকে উত্তর ও পূর্ব পাড়ে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের ফুল ও ফলের গাছ।
মেলার আরেকটি রঙিন দিক হলো নারীদের প্রিয় রেশমি চুড়ি, চুলের ফিতা, হাতের বালা ইত্যাদি। এছাড়া বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ঝাড়ু ব্যবসায়ীরাও অংশ নিয়েছেন।
প্রতিদিন বিকেলের পর থেকেই জমে উঠে মেলা। সন্ধ্যার পর মানুষের ঢল নামে লালদীঘীর চারপাশে। শত বছরের এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজন শুধু একটি মেলা নয়, এটি চট্টগ্রামের সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ, যা পুরনোকে ধরে রেখে নতুন প্রজন্মকে সংযুক্ত করে ঐতিহ্যের সাথে।।
এআরই/বাংলাধারা












