৩১ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত আরো বাড়বেই; বিশেষজ্ঞদের মতামত

তারেক মাহমুদ »

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুর হারও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এমনিতেই চট্টগ্রামে জনসমাগম, বাজার, শিল্প কারখানার পরিমাণ বেশি। তার উপর স্বাস্থ্য সচেতনতা, মাস্ক পরার বিষয়টি মানছেন না কেউই। পাশাপাশি কোরবানকে সামনে রেখে পশুরহাটে জনসমাগম হবেই। সবকিছু মিলিয়ে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার ক্রমাগত আরো বাড়তে থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ট্রমা ও অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বাংলাধারাকে জানান, বর্তমানে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের হার বাড়ছে এবং নি:সন্দেহে সামনে তা আরো বাড়বে। জনসাধারণ যদি সতর্ক না হয় তাহলে করোনা আক্রান্তের হার শুধু বাড়বেই না, তা আরো ভয়াবহ রুপ ধারণ করতে পারে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৩৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে নগরীতে ৫ হাজার ৫১৫ জন ও উপজেলায় ২ হাজার ৫২০ জন রয়েছেন। মৃত্যুর সিছিলে নাম লিখিয়েছেন ১৭৩ জন। নগরীতে এখন পর্যন্ত ১৩৩ জন ও উপজেলায় ৪০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা জয় করে বাড়ি ফিরেছেন ৯৬৫ জন। তাছাড়া হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৩ হাজার ৪৪৫ জন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চট্টগ্রামে উপজেলার তুলনায় নগরীতেই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। কাজেই সামনে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়লে তা নগরীতেই বাড়বে বলে ধারণা করছেন তারা। তাদের দাবি, যেহেতু নগরীতে ঘনবসতি, মানুষের মধ্যে কোন স্বাস্থ্য সচেতনতা নেই সেহেতু নগরীর মানুষ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনাকে রুখে দেয়া বেশ কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়াবে।

চট্টগ্রামে বর্তমানে মোট সাতটি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনা নমুনা পরীক্ষায় বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরাই করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তরুণ ও মাঝবয়সীরা স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে হাটহাজারীতে। সেখানে এখন পর্যন্ত ৪১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া সাতকানিয়ায় ১৩৭ জন, সীতাকুন্ডে ২৫৫ জন, বোয়ালখালীতে ২৩০ জন, পটিয়ায় ২৭০ জন, আনোয়ারায় ৯১ জন, চন্দনাইশে ১৬৭ জন, ফটিকছড়িতে ১২৬ জন, মিরসরাইয়ে ৭৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া লোহাগাড়ায় ১২৬ জন, সন্দ্বীপে ৩৫ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১১১ জন, বাঁশখালীতে ১৩৩ জন ও রাউজানে ১৮৫ জন আক্রান্তের খাতায় নাম লেখান।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বাংলাধারাকে জানান, চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা তো আছেই। এটা খুব ধীর গতি এগোচ্ছে। আক্রান্তের দিক থেকে করোনা গ্রাফের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে সময় লাগবে। তবে আমরা সে ঝুঁকিতে আছি। দূর্ভাগ্য হচ্ছে আমরা আমাদের জনসাধারণকে এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে সচেতন করতে পারি নি। যদি ৮০ শতাংশ মানুষকে আমরা পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য সচেতনতার আওতায় আনতে পারি, মাস্ক পরাতে পারি তাহলে খুব দ্রুত করোনা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো। এই পরিস্থিতিতে মাস্ক না পরলে শাস্তির আওতায় আনার কোন বিকল্প নেই। আর মানুষকে অবশ্যই প্রতিদিন একটা করে নতুন মাস্ক পরতে হবে। একটা মাস্ক বার বার ব্যবহার করলে করোনা ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।   

তিনি বলেন, সামনে কোরবান আসছে। কোরবানকে উদ্দেশ্য করে পশুর হাট বসবে। আমরা বার বার এখন থেকেই বলে যাচ্ছি পশুর হাটগুলো যথেষ্ট দূরত্ব নিয়ে বসাতে হবে। দূরত্ব বজায় রেখে পশুগুলো দাঁড় করাতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে আলাপ আলাচনা করেছি। শহরকেন্দ্রিক হাটগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যারা বেচাকেনা করতে আসবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। না হয় নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনবো আমরা।

সার্ভিল্যান্স টিমের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, আমরা নিয়মিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে তদারকি করছি। আমরা মোবাইল কোর্ট থেকে শুরু করে সপ্তাহে অন্তত দু’বার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে মিটিং করছি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অনেক শয্যা খালি রয়েছে। সমস্যা হলো, সবাই সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে চায়। তবে আমরা বেসরকারি খাতগুলোকে সেবার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।

নগরবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নগরবাসীর সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা জাতিগতভাবে চরম অসচেতনতার পর্যায়ে চলে আসছি। আর এর জন্য সম্পূর্ণরুপে আমরা নিজেরাই দায়ী। স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন কাউকে দায়ী করা যাবে না। লকডাউন করা সত্ত্বেও মানুষ নিয়ম মানছে না, তাহলে তো করোনার সংক্রমণ বাড়বেই। নগরে জনসমাগম বেশি, বাজার, শিল্প কারখানা বেশি, তাই নগরেই করোনায় আক্রান্তের হার আরো ব্যাপকহারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই করোনা মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বাংলাধারাকে জানান, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্তের হার অবশ্যই বাড়বে। আমাদের জনসাধারণ কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মাস্ক পরার জন্য, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য একে অপরকে উদ্বুদ্ধ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। অন্যথায় চট্টগ্রামে করোনা আরো শক্তিশালীভাবে থাবা বসাবে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন