ইয়াসির রাফা »
চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের পর থেকে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি নমুনা পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা নিয়ে। টানা কয়েকদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও নমুনা দিতে পারছেন না অনেকে। দিন দিন রোগী বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারছেনা হাসপাতালের ল্যাবগুলো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৭ টা থেকে লাইনে দাড়িয়ে দুপুর ১ টায় হাসপাতালের ভেতরেও যেতে পারেনি নমুনা দিতে আসা এ মানুষগুলো। তাদের অভিযোগ- আত্মীয় পরিচয়ে কিংবা অর্থের বিনিময়ে পেছন থেকেও আগে ঢুকছেন অনেকে।
চট্টগ্রামে সরকারি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়ও চলছে নমুনা সংগ্রহ। রোগীর সংখ্যা সেখানে কম। সরকারি হাসপাতালগুলোতে টেস্ট করাতে না পারছেন যারা, তারা টাকার বিনিময়ে যাচ্ছেন সেখানে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় নানা মাত্রিক ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে ভুক্তভোগীরা। করোনা পরীক্ষা করতে গেলে পড়তে হচ্ছে অব্যবস্থাপনা ও বিড়ম্বনায়। নির্ধারিত পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসলেও পরীক্ষা করারও সুযোগ পান হাতেগোনা কয়েকজন। কেউ কেউ দিনের পর দিন চেষ্টা করেও করোনা পরীক্ষা করাতে পারেননি। ফলে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে করেনা পরীক্ষা করতে আসা ব্যক্তিদের।
এখানকার সরকারি ও বেসরকারি মোট ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব, বিআইটিআইতে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাব, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইমপেরিয়াল হাসপাতাল, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন প্রায় হাজারের মতো টেস্ট করা হলেও টেস্ট করতে আসা রোগীর সংখ্যা এর চেয়েও দ্বিগুন।
অভিযোগ রয়েছে, করোনা পরীক্ষায় ও নমুনা সংগ্রহে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা। হেল্পলাইনে ফোন করে সাড়া পেতে লাগে দীর্ঘ সময়। কখনো নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় না। নমুনার ফলাফল পেতেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই।
রায়হান নওশাত নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জুন মাসের ৩ তারিখ (৩ জুন) নমুনা দিয়ে এসেছিলাম। নমুনা দেওয়ার পর ২-৩ দিন পর রেজাল্ট দেওয়ার কথা থাকলেও রেজাল্ট তো আর আসে না। প্রথমে শুনি এগুলো নাকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে টেস্ট করেছিল, সেখানের কীট নিয়ে প্রশ্ন উঠার কারণে এগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়েছে পুনরায় টেস্ট করানোর জন্য। কিন্তু এক সপ্তাহ পরেও রেজাল্ট আসে না। ১২ তারিখ (১২ জুন) আমাকে জানানো হয়, আমার ৩ তারিখের নমুনায় কোভিড-১৯ পজেটিভ এসেছে। কিন্তু কেন জেনো আমার এ রেজাল্টের উপর আস্থা রাখতে পারছি না।’
‘তাই প্রাইভেটে ৩৭০০ টাকা খরচ করে ফলোআপ টেস্ট করার জন্য ইম্পেরিয়াল হসপিটালে যোগাযোগ করি। সেখানে শুনি ১৯ তারিখ পর্যন্ত সিরিয়াল বুকড। ৩৭০০ টাকা খরচ করেও ‘করোনার চেয়েও শক্তিশালী একটা দেশে’ করোনা টেস্টের জন্য সিরিয়াল পাওয়া যায় না। এই থেকে বুঝা যায় দেশে করোনা টেস্টের কি বেহাল দশা চলছে।’- যোগ করেন ভুক্তভোগী রায়হান।
এই ভুক্তভোগী আরও বলেন, পরে হাটহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীক্ষা করাই। ওখানে দিনে মাত্র ২৫টি নমুনা নেওয়া হয় এবং আমার ভাগ্য এবার ভাল ছিলো সেখানে সিরিয়াল পেয়ে যাই। ফলোআপ টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ আসে।
দেখা গেছে, চট্টগ্রামে এক জনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পরে চট্টগ্রামের নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তা করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণও করেছিলেন অনেকে। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক দপ্তরে যোগাযোগ করে তিনদিন পর তাঁর পরিবারের সদস্যদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
অন্যদিকে, করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় অনেকেই টেস্ট করাতে চান। কিন্তু এমন রোগীদের কোনো যানবাহন বহন করতে চায় না। ফলে তারাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এদিকে, বেসরকারি রোগ নিরূপণ কেন্দ্র শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি (প্রাইভেট) লিমিটেডে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় করোনা টেষ্টা করানো হচ্ছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘জ্বর তিনদিন পর্যন্ত না থাকলে নমুনা পরীক্ষার দরকার নেই। তিন দিনের বেশি থাকলে নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে পরীক্ষা করানোর কথা বলা আছে। তবে আমাদের নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর জনবল কম হওয়ায় যথা সময়ে তা সংগ্রহ করা হয় না। তাছাড়া আমাদের প্রয়োজনীয় পরিবহন সুবিধাও নেই। ফলে এটিও একটি বিড়ম্বনা।’
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, আইইডিসিআর-এ হটলাইনে সারাদেশ থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ ফোন করে। লাইনগুলো এ কারণে ব্যস্ত থাকে। ফলে টেলিফোনে পেতে কিছুটা সময় লাগে। তবে ভোগান্তি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) সকালে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যনুযায়ী, চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়ে ৭২২০ জনে। একইসোথে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ থেকে নেগেটিভ হয়েছেন আরও ১৬ জন। আর তাতে করে চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা দাঁড়ালো ৮৮৫ জনে। অন্যদিকে, করোনার থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩ জন। যাদের ২ জন নগরের ও ১ জন উপজেলার। ফলে চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এখন ১৫৫।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ













