২৪ অক্টোবর ২০২৫

মোস্তফা হাকিম কলেজে শিক্ষিকা হেনস্থা ও কমিটি দ্বন্দ্ব

সংঘাতে উত্তপ্ত মোস্তফা হাকিম কলেজ, শিক্ষক-ছাত্রসহ আহত অন্তত ৮: থানা ঘেরাওয়ে উত্তাল রাত

২০ তারিখ সমাধানের আশ্বাসে সড়ক ছাড়লো উভয়পক্ষ

চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলীর আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজে এক নারী শিক্ষককে কলেজে আসতে নিষেধ ও বিএনপি নেতার আত্মীয়কে জোরপূর্বক পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিনভর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীসহ অন্তত ৭-৮ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে, রাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা থানায় গিয়েও আটকে পড়েন এবং ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে আকবরশাহ থানা ঘেরাও করেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল থেকেই উত্তেজনা দেখা দেয় কলেজ চত্বরে। অভিযোগ, কলেজ পরিচালনা কমিটির সদ্য অন্তর্ভুক্ত বিএনপি নেতা মনজুরুল আলম মঞ্জুর চাচা মাঈনু চৌধুরীকে জোর করে কমিটিতে ঢোকানো এবং তার অনুসারী সিরাজ উদ্দিন এক নারী শিক্ষককে মৌখিকভাবে কলেজে না আসার নির্দেশ দিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। প্রতিবাদে তারা টেস্ট পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভে নামে।

বিকেলে কলেজে সমঝোতার উদ্দেশ্যে একাধিকবার বৈঠকে বসেও ব্যর্থ হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। এক পর্যায়ে কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে হাতাহাতি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটে, যেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

শিক্ষার্থীদের দাবি, হামলায় দুই নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর কর্মী এসএম মারুফ ও আয়াত। একইসঙ্গে এনসিপির কোতোয়ালী থানার এক নেতার ওপরও প্রকাশ্যে হামলার অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যার পর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ও ছাত্রপরিষদের শতাধিক শিক্ষার্থী থানার সামনে অবস্থান নেয়। পাল্টা অবস্থান নেয় ছাত্রদল ও বিএনপির প্রায় ২০০ নেতাকর্মী। রাত ১০টার দিকে সিএমপি’র ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপে উভয় পক্ষকে শান্ত করা সম্ভব হয়।

উভয় পক্ষকে যৌক্তিক বিচার ও আহতদের বক্তব্য শোনার আশ্বাস দেওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং তারা ধীরে ধীরে থানা এলাকা ত্যাগ করে। তবে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও তদন্তমূলক বিচার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

নাছোড়বান্দা উভয় পক্ষ!

ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিরাগত নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে ছাত্রপরিষদের প্রায় শতাধিক ছাত্র মিছিল নিয়ে এসে আকবরশাহ থানা ঘেরাও করে। এর কিছুক্ষণ পর বিএনপি ও ছাত্রদলের প্রায় ২০০ নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে এসে থানার সামনে অবস্থান নেয়। রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত থানার বাইরে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে তাদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এরমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও পোস্ট দিতে দেখা গেসে অনেককে।

কে কি বলছেন?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন, চট্টগ্রাম নগর আহবায়ক আরিফ মঈনুউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা করছে ছাত্রদল। এ বিষয়ে আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় আকবরশাহ থানায় মামলা করতে আসার পর ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা মিছিল নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। আমাদের এক সহযোদ্ধা গুরুতর আহত হয়েছেন। ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা বাইরে জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।’

নগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক (দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘ছাত্রদলের নাম জড়িয়ে অনেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। সকালে যেটা হয়েছে সেটা ভুল বোঝাবুঝি। কিন্তু এখন ছাত্রলীগ ও শিবির সেটার সুযোগ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ট্যাগ দিয়ে লাইভ দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি ঘটনাস্থলে আছি। এখানে উৎসুক জনতা বেশি। সেনাবাহিনী এসেছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে আমরা সবাই চেষ্টা করছি।’

আশ্বাসে সড়ক ছাড়লো উভয় পক্ষ!

পপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে থানা পুলিশের হিমসিম অবস্থায় যোগ দেয় সিএমপি পশ্চিম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া। এরপর থানার সামনে উপস্থিত হয় সেনাবাহিনীর টিম। পরবর্তীতে উভয় পক্ষের কথা শুনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ সমন্বয়ে আশ্বাস দেয় আহতদের কথা শুনে যৌক্তিক বিচার করা হবে। এরপর একে একে মাঠ ছাড়ে উভয়পক্ষ।

এএস/বাংলাধারা

আরও পড়ুন