বাংলাধারা প্রতিবেদন »
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রামেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তিন’শ ছাড়িয়ে গেছে।
তারমধ্যে এক তৃতীয়ংশই গত তিনদিনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সামনে এ সংখ্যা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
তবে সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় তা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে অভিমত স্বাস্থ্য বিভাগের। যদিও এ বিষয়ে বরাবরের মতেই আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবুও শঙ্কা ভর করছে সাধারাণ মানুষদের।
এদিকে, দিনদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এতদিন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক তিনটি ডেঙ্গু কর্নার থাকলেও, রোগীদের ভিড়ের কারণে গতকাল (শনিবার) একটি ওয়ার্ডেই স্থানান্তর করা হয়েছে ভর্তিরতদের। এরমধ্যে আগামী দু-একদিন রোগীর সংখ্যা বাড়লে আরও হিমশিম খেতে হবে বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে, এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওয়ার্ডের বাইরে হাসপাতালের বারান্দায় এক রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে। এসবের মধ্যেই গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে চট্টগ্রামে আরও ৩৩ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তারমধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ২৮ জন রোগী। বাকি পাঁচজনের মধ্যে ম্যাক্স হাসপাতালে ১ জন, পার্কভিউ হাসপাতালে ১ জন, বিআইটিডি হাসপাতালে ১জন, মেট্টোপলিটন হাসপাতালে ১ জন ও ইউএসটিসি হাসপাতালে ১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে তা জানা গেছে।
তাদের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১৬ তে। চমেক হাসপাতালের তথ্য অনুসারে, গত ১৫ দিনে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৭০ জন রোগী।
এরমধ্যে গত তিন দিনেই ভর্তি হয় ৬৭ জন রোগী। ভর্তি হওয়াদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭১ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও বাকি ৯৯ জন রোগী এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। যদিও সম্প্রতি চালু হওয়া পৃথক তিনটি ডেঙ্গু কর্নারের শয্যা সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জনের। তা এখন ১১০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।
অতিরিক্ত রোগী বাড়ায় গতকাল (শনিবার) হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১৩ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু কর্নার করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, গতকাল (শনিবার) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ রোগীদের হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাছাড়া ডেঙ্গু কর্নারে শর্য্যা না থাকায় একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকেও ওয়ার্ডের বাইরে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডেই তাদের রেখে চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তাই এতদিন চলা ১৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রোগীদের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। সামনে রোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে’।
অন্যদিকে, দিনদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এডিস মশা বৃদ্ধি পাওয়ার সময় হচ্ছে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু জুলাই মাসের শেষে ও আগস্ট মাসের শুরুতে এসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সামনে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও অভিমত তাদের।
গতকাল (শনিবার) দুপুরে চিকিৎসকদের একটি সেমিনারেও এ বিষয়ে কথা বলেন চিকিৎসকরা।
এ প্রসঙ্গে স্বয়ং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে যে হারে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে সামনে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
তবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এডিস মশা নিধন করা গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে’। তাই চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আশার কথাও বলেন তিনি।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম/আরইউ













