৪ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রামে তরুণ ও মধ্য বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়

তারেক মাহমুদ »

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে দিন যত যাচ্ছে করোনায় আক্রান্তের হার তত বেড়েই চলেছে। এরমধ্যে গতকাল থেকেই পুরোদমে চালু হয়েছে অফিস-আদালতসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। আজ থেকে নগরের সড়কজুড়ে নেমেছে গণপরিবহন। মানুষের জীবন-জীবিকা ও দেশীয় অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিচার বিবেচনা করে সরকার লকডাউন শিথিল করেছে। পাশাপাশি চিকিৎসাবিহীন হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরত পাঠালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে সরকার। করোনার বিস্তার রোধে দেয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিয়ম মেনে চলাফেরা না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত তিন মাসের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে চট্টগ্রামে তরুণ ও মধ্য বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়।

গতকাল (৩১ মে) পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ২ হাজার ৫৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তথ্য পর্যালোচনায় ২১ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত তরুণ এবং ৩৬-৫০ বছর পর্যন্ত মধ্য বয়সী বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। হিসেবে তরুণ ও মধ্য বয়সীদের আক্রান্তের হার মোট আক্রান্তের ৭৬ শতাংশ।

চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সব দিক থেকে বারবার ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হলেও তরুণ ও মধ্য বয়সীদের মাঝে বাইরে ঘুরা-ফেরা ও আড্ডা দেয়ার প্রবণতা রয়ে গেছে। অকারণেও অনেকেই বের হয়ে ঘুরাঘুরি করছেন। যার কারণে এই বয়সীদের করোনায় আক্রান্তের হার বেশি।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বিও বলছেন, এই বয়সীরা বাইরে বেশি ঘুরা-ফেরা করছেন। ঘরে থাকার জন্য আমরা বারবার অনুরোধ করছি। কিন্তু অনেকেই কথা শুনছেন না। অকারণে বাইরে বের হচ্ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। আর বাইরে বের হলেই করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি। তাই এই বয়সীরা বেশি আক্রান্ত।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়- এখন পর্যন্ত ০-১০ বছর বয়সী ৩৯ জন পুরুষ ও ২২ জন মহিলা, ১১-২০ বছর বয়সী ১০১ জন পুরুষ ও ৭৪ জন মহিলা, ২১-৩০ বছর বয়সী ৪৫৭ জন পুরুষ ও ১৬২ জন মহিলা, ৩১-৪০ বছর বয়সী ৫৬৬ জন পুরুষ ও ১৪৩ জন মহিলা, ৪১-৫০ বছর বয়সী ৩৪০ জন পুরুষ ও ১০৬ জন মহিলা, ৫১-৬০ বছর বয়সী ২২৯ জন পুরুষ ও ৮৩ জন মহিলা, ৬০-উধ্বে ১৭৬ জন পুরুষ ও ৪০ জন মহিলা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

করোনায় তরুণ ও মধ্য বয়সীদের বেশি আক্রান্তের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব বলছেন- অনেকের এখন উপসর্গও দেখা যাচ্ছে না। অর্থাৎ অনেকের শরীরে করোনাভাইরাস রয়েছে, কিন্তু তাঁরা জানেন না। কেউ জানেন না। এটিই সবচেয়ে ভয়ের বিষয়। কারণ, আপনার পাশ দিয়ে সুস্থ মানুষ হিসেবে যিনি হাঁটছেন, যার সাথে আড্ডা দিচ্ছেন; তিনিও এই ভাইরাসের নীরব বাহক হতে পারেন। তাই নিজেদের অজান্তেই এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে। এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে ঘরে থাকার বিকল্প নেই। অর্থাৎ ঘরে থাকলেই আপনি নিরাপদ। আর ঘর থেকে বের হলেই সংক্রমণের ঝুঁকিতে। আমরা বারবার এ বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষকেই দেখা যাচ্ছে, তাঁরা কোন কিছুই মানছেন না। বিশেষ করে তরুণ ও মধ্য বয়সীরা ঘরে থাকছেন না। অকারণে বাইরে ঘুরছেন। তাই এই বয়সীদের করোনা সংক্রমণের হার বেশি। ঘরে না থাকলে এ ভাইরাসের সংক্রমণ আরো ভয়াবহ হতে পারে বলেও সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই চিকিৎসক।

এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। মাঠ পর্যায়ে কর্তব্যরতদের মাঝে পুলিশ সদস্যদের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি চট্টগ্রামে।

আক্রান্তের এলাকাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়- সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে মহানগর এলাকায়। মহানগরে এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৪১ জন। আর উপজেলা পর্যায়ে শনাক্ত হয়েছে ৫৪৭ জন।

উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে হাটহাজারীতে। এখন পর্যন্ত ৮৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে এই উপজেলায়। এরপর সীতাকুণ্ডে ৮১ জন, পটিয়ায় ৮৬ জন, মীরসরাইয়ে ৯ জন, বোয়ালখালীতে ২৯ জন, আনোয়ারায় ১০ জন, চন্দনাইশে ৪০ জন, ফটিকছড়িতে ৬ জন, লোহাগাড়ায় ৫৭ জন, রাউজানে ১৯ জন, রাংগুনিয়ায় ৩৬ জন, বাশখালীতে ২৫ জন, সন্দীপে ১৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আক্রান্তদের মাঝে এখন পর্যন্ত হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি আছেন ২১৯ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১৭ জন। তবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন