চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভয়াবহ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খাল খননের সময় ওয়াসার মূল সঞ্চালন পাইপ কেটে যাওয়ায় বিশাল এলাকাজুড়ে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে গত কয়েকদিন ধরে নগরজুড়ে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে।
পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত: কোথায় ঘটেছে বিপর্যয়?
ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানান, রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ থেকে অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়কের মাধ্যমে নাসিরাবাদ রিজার্ভারে পানি আসে। এখান থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের সংযোগস্থলে ওয়াসার ৪৮ ইঞ্চি সঞ্চালন পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নগরীর বিশাল এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
সংকটে নগরবাসী: কোথায় কী অবস্থা?
হালিশহর, আগ্রাবাদ, চকবাজার, দেওয়ানবাজার, মাদারবাড়ি, দেওয়ানহাট, লালখান বাজার, ওয়াসার মোড়, বায়েজিদ, অক্সিজেন, জামালখানসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় পানির জন্য তীব্র সংকট চলছে। কোথাও সপ্তাহে এক দিন, কোথাও দুই দিন পানি মিললেও বর্তমানে এক ফোঁটাও নেই।
বাসিন্দাদের দুর্ভোগ:
হালিশহর এলাকার বাসিন্দা রবিউল বলেন, “হঠাৎ পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বিপদে পড়েছি। রান্নার পানিও কিনে আনতে হচ্ছে।”গৃহিণী রহিমা বেগম জানান, “আগে থেকে পানি জমিয়ে রাখার সুযোগ পাইনি, এখন চরম সংকটে আছি।”
মাদারবাড়ির রহমান আলী বলেন, “সোমবার কিছুটা পানি পেয়েছিলাম, এরপর আর পাইনি। রান্নার জন্য কেনা পানি ব্যবহার করছি, কিন্তু অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।”
চকবাজারের আবদুল্লাহ বলেন, “এখানে ওয়াসার পানি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আশপাশে পুকুরও নেই, তাই খুব অসুবিধায় আছি।”
দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন জানান, পাইপলাইন মেরামতে টিম নিরলস কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত পাইপটি সংস্কার করা জটিল হলেও দুই-একদিনের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।
ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিদিন ৪৮ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে, যার মধ্যে ১৪ কোটি লিটার সরবরাহ করে ক্ষতিগ্রস্ত লাইনটি। এটি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় নগরীর বিশাল অংশে পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
নগরবাসী এখন চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ওয়াসার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।













