বাংলাধারা প্রতিবেদক »
দীর্ঘ জল্পকল্পনা ও প্রতীক্ষার পর অবশেষে শেষ হলো চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের ত্রী-বার্ষিক সম্মেলন।সোমবার (৩০ মে) বেলা ১২টায় নগরীর পাঁচলাইশস্থ দি কিং অব চিটাগাং-এ সম্মেলনে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এসময় কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ জাতীয় পতাকা ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খাঁন নিখিল যুবলীগের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে যুবলীগের অতীত, বর্তমান ও ভতিষ্যৎসহ দেশের অগ্রযাত্রায় তাদের ভূমিকায় প্রশংসা করে অতিথিবৃন্দ মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য নিম্নে তুলে ধরা হলো—
শেখ ফজলুল করিম সেলিম
অবৈধভাবে কেউ ক্ষমতা দখল করলে সংবিধান অনুযায়ী তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড— এই বিধান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি জাতীয় সরকারের নামে জিয়াউর রহমানের স্টাইলে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন কাউকে না দেখারও আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (৩০ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নগরীর পাঁচলাইশে কিং অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা এবং বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এসময় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলও ছিলেন।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। আগামী নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ— ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবে নির্বাচন হবে। ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো আর কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে না। কারা আজ আমাদের গণতন্ত্র শেখায় ? বিএনপি—এই বিএনপি ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া দল। তারা কখনোই গণতান্ত্রিক হতে পারে না।’
জাতীয় সরকারের তত্ত্বকে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি এখন বলছে জাতীয় সরকারের কথা। জাতীয় সরকার করতে হলে আগে কথা দে— নির্বাচনের বাইরে কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারের কাছে কখনও ক্ষমতা হস্তান্তর হবে না। আর কোনোদিন অবৈধ শক্তি ক্ষমতায় যেতে পারবে না—সংবিধানে আমরা সেটা রেখেছি। যদি কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা নেয়, নেওয়ার চেষ্টা করে, ষড়যন্ত্র করে কিংবা হুমকি দেয়-তাদের প্রধান শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।’
‘ওদের চেহারা জনগণের সামনে উন্মোচিত করতে হবে। অপকর্ম করলে মাফ নাই। ফাঁসিতে ঝুলতে হবে। সুতরাং লোভ করো না।’— বলেন শেখ সেলিম
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সরকারের নামে জিয়াউর রহমানের মতো ক্ষমতা দখল করবি- সেটা হবে না। তোরা (বিএনপি) নির্বাচনে আসলে আসবি, না আসলে আসবি না। সত্তরের নির্বাচনে বিপ্লবী দল ন্যাপ প্রার্থী দিল, হঠাৎ কি হল তারা নির্বাচন থেকে সরে গেল, আজ ন্যাপ কোথায় ? ন্যাপের আজ অস্তিত্ব নেই। সুতরাং অস্তিত্ব বাঁচাতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে।’
মাহবুবুল আলম হানিফ
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, মানুষ বিএনপির অপপ্রচার বিশ্বাস করে না। রাজপথে সংগ্রাম করে জনতার ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি অনেক চক্রান্ত করেছে। স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চিঠি পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে যে উন্নয়ন, তা এমনিতে হয়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন সরকার গঠন করা হয়, তখন এদেশে মাথাপিছু আয় কত ছিল তা দেখুন। এখন তা ২ হাজার ৮০০ ডলার ছাড়িয়েছে। অথচ ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করা হয়, তখন কী ছিল? আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করেছি। মানুষ আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিয়েছে। পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। এরপরও মানুষ আওয়ামী লীগকে চায়।
হানিফ বলেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি দুইটি খাতের ওপর নির্ভর করে। সেগুলো হলো- কৃষি ও পর্যটন। করোনায় তাদের ব্যবসায় ধস নামে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি নির্ভর করে কয়েকটি খাতের ওপর। এরমধ্যে তৈরি পোশাক খাতের অবদান অনেক। তাই আওয়ামী লীগ সরকার পোশাক খাত টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই আমাদের রিজার্ভ এখনো পর্যাপ্ত আছে। এসব আমাদের দেশের সব জনগণ জানে, বোঝে। তাই বিএনপি যে অপপ্রচার করছে, তা মানুষ বিশ্বাস করে না।
শেখ ফজলে শামস পরশ
২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, দেশে আরেকটি এক-এগারোর আয়োজন চলছে। তবে বাংলাদেশের যুবসমাজ এ ষড়যন্ত্র বরদাশত করবে না।
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের পরিকল্পিত নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যেন এই সরকারের ওপর আশা হারিয়ে ফেলে- সেই চক্রান্ত হচ্ছে। এই চক্রান্ত বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে এক-এগারোর কুশীলবরা। জাতীয় সরকারের তত্ত্ব হাজির করা হয়েছে। এরপর কিছু ব্যক্তি সরব হয়েছেন। আজ তিন মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সুতরাং শেখ হাসিনাকে হটাতে হবে- এটা সুশীলদের হিসাব। তারা শুরু করেছে সেই পুরনো খেলা। চারদিকে হতাশার নানা বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে।’
‘কয়েকজন সুশীল সম্প্রদায়ের লোক, নিয়ন্ত্রিত কিছু গণমাধ্যম, ক্ষমতার উচ্ছ্বিষ্ট মধু খাওয়া কিছু লোক, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেউ কেউ মিলে আরেকটি এক-এগারোর আয়োজনের চেষ্টা করছে। নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগে কলাকুশলীরা গ্রিনরুমে অপেক্ষা করছে। তাদের এই অপেক্ষা অপেক্ষাই রয়ে যাবে। বাংলাদেশের যুবসমাজ এসব ষড়যন্ত্র বরদাশত করবে না।’
পরশ বলেন, ‘সুশীলদের দাবি– নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। অর্থাৎ তাদের পছন্দের অগণতান্ত্রিক, অনির্বাচিত শক্তির হাতে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। কী কারণে? সুশীলদের ক্ষমতার জন্য, সুশলীদের সুবিধাবাদী উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য? স্পষ্ট বলতে চাই, আগামী নির্বাচন জননেত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। শেখ হাসিনার থেকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য, বেশি নিরপেক্ষ আর কেউ নেই। তিনি নিরপেক্ষতার মূর্ত প্রতীক। শেখ হাসিনা নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা-নিরপেক্ষতার প্রমাণ ইতোমধ্যে দিয়েছেন।’
৭৫ পরবর্তী সুশীল সমাজের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘হলিডে, গণকণ্ঠ পত্রিকা বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এক শ্রেণির ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী দেশ চলে গেছে বলে আর্তনাদ শুরু করেছিল। মুনাফাখোর, কালোবাজারিরা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। সব মিলিয়ে পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভা ছিল একটা আইওয়াশ। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর একটা অসাংবিধানিক উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। কিছু নামকরা বুদ্ধিজীবী ও সুশীলরা ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে ওই পরিষদে যোগ দেয়। কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ করেনি, শিশু রাসেলকে হত্যার প্রতিবাদ করেনি। ক্ষমতা পেয়ে তারা গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার সব ভুলে গিয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে এরশাদ। সেই এরশাদের সঙ্গেও সেই বুদ্ধিজীবী আর সুশীলরা। পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনীতির গতিপথ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- একটি সুশীল গোষ্ঠী, কিছু গণমাধ্যম, সরকারের ভেতরে থাকা কিছু ষড়যন্ত্রকারী এবং আন্তর্জাতিক চক্র এক হয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।’
বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে পরশ বলেন, ‘নব্বইয়ে এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে একটা গণতান্ত্রিক ধারার সূচনা হয়েছিল। কিন্তু সেই গণতন্ত্রের নাটাই ছিল অনির্বাচিত সুশীলদের হাতে। নির্বাচনের আগে একটা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হতো, তাদের হাতে থাকত অসীম ক্ষমতা। ৯১, ৯৬, ২০০১- এই তিন মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তাদের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে দলকে চেয়েছে তাদের ক্ষমতায় এনেছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের আড়ালে ক্ষমতার চাবি চলে গিয়েছিল অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে।’
‘২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। নির্বাচনের আগেই হেরে গেল আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে নির্যাতন-নিপীড়ন, দুর্নীতি-লুটপাট এমনভাবে শুরু করে, মানুষ তাদের হটাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তখনই সুশীলরা তাদের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম নিয়ে আবারও তৎপর হয়ে ওঠে’- বলেন শেখ ফজলে শামস পরশ।
ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পরশ বলেন, ‘নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে প্রচারণা শুরু হয়-বিএনপি খারাপ, আওয়ামী লীগও খারাপ। বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুই দলই ব্যর্থ। এভাবে সুশীলদের মাঠে নামানোর মঞ্চ তৈরি করা হয়। সুশীলদের নেতা নির্বাচন করা হয় এই চট্টগ্রামের একজন অর্থনীতিবিদকে। তার হাতে তুলে দেওয়া হয় নোবেল শান্তি পুরস্কার। চারদিকে ব্যর্থতার হাহাকার দেখিয়ে ভীতি সঞ্চার করা হয়। মঞ্চে আর্বিভূত হয় সুশীলরা। সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত নিয়ে ক্ষমতায় আসে অনির্বাচিত সরকার, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সংবিধান অনুযায়ী একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন। কিন্তু সুশীল সংবিধান বিশেষজ্ঞরা ফতোয়া দিলেন- না না সবকিছু ঠিক আছে।’
তিনি বলেন, ‘সেই সময় একমাত্র শেখ হাসিনা বুঝেছিলেন- এটা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তিনি বুঝেছিলেন- জনগণের ক্ষমতার চাবি আসলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে সুশীলদের সিন্দুকে বন্দী। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হলো।’
সেই এক-এগারোর প্রেক্ষাপট তৈরিতে এখনও কিছু গণমাধ্যম সক্রিয় অভিযোগ করে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘কিছু কিছু গণমাধ্যম এখন বিরোধীদলের ভূমিকায় নেমেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের সমালোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওই সমালোচনা যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তাহলে সমালোচনা করার অধিকার জনগণেরও রয়েছে। কিছু কিছু পত্রিকা এরকম কাজ করছে। দেশটাকে ঝুঁকিপূর্ণ, সংকটময় চালানোর চেষ্টা করছে। সরকার ব্যর্থ এটা প্রমাণ করতে তারা মরিয়া।’
উন্নয়ন সহযোগীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কিছু উন্নয়ন সহযোগী আছে, যারা দেশে শক্তিশালী সরকার চায় না। ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এদের অস্বস্তিতে ফেলে। রাজনীতিবিদদের ছেড়ে এরা সুশীল বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পছন্দ করে। বাংলাদেশের উন্নয়ন নয়, এদেশের বাজার দখলই তাদের প্রধান স্বার্থ। মুখে এরা গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকারের কথা বলে। বাস্তবে এদের বিরোধী শক্তির সঙ্গে এরা গোপন সখ্য গড়ে তোলে। এসব কারণে একটি গণতান্ত্রিক সরকার সংকটে পড়ে। তখনই একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি হয়।’
সুশীল সমাজের উদ্দেশে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে আপনাদের এসব অপরাজনীতি বন্ধ করুন। যদি দেশকে ভালোবাসেন, গঠনমূলক বিরোধিতা করুন। কোনো জাতীয় সংকটে তো আপনাদের জনগণের পাশে দেখলাম না। যখন দেখলেন সরকারের মেয়াদ শেষ, তখন একটি গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলেন। তা-ও কীভাবে? বিদেশর সঙ্গে ফন্দি করে। কিছু মনে করবেন না, নতুন প্রজন্ম আপনাদের বিশ্বাস করে না। আপনাদের ষড়যন্ত্র এদেশের যুবসমাজ বুঝতে পারে। গঠনমূলক রাজনীতি আর দেশের উন্নয়নের দিকে নজর দেন। তাহলে কোনো একদিন হয়তো সফল হবেন। বিভ্রান্তি আর প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে কোনো লাভ হবে না।’
মাইনুল হোসেন খান নিখিল
প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, নেতাদের মধ্যে যদি ঐক্যের সৃষ্টি না হয় তাহলে কর্মীদের মাঝে ঐক্য আসার কোনো সুযোগ নেই। ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। ঐক্য না থাকলে বিএনপি জামায়াত নতুন করে ষড়যন্ত্রের সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য দেখা যায় না। যদি নেতা কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকতো তাহলে বিএনপি জামায়াত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই বাংলায় যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল সেদিন যদি চট্টগ্রামের নেতারা ঐক্যবদ্ধ থাকতেন তাহলে তাদের প্রতিরোধ করতে এই নেতৃত্বই যথেষ্ট ছিল।
নিখিল বলেন, বিএনপি জামায়াত চট্টগ্রামের মাটিতে মা-বোনের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে। আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের হাত পা কেটে দিয়েছিল। চোখ উপড়ে ফেলেছিল। পঙ্গু করে দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য কেড়ে নিয়েছিল। এমনকি গোয়ালের গরু থেকে শুরু করে পুকুরের মাছ, গাছপালা কেটে পরিষ্কার করে ফেলেছিল।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশেমাইনুল হোসেন খান নিখিল আরও বলেন, নওফেল ভাই নাছির ভাই ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। আমি কষ্ট পাই, আমার চেয়ারম্যানসহ নেতৃবৃন্দ কষ্ট পাই কী কারণে জানেন?
প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমরা কি শেখ হাসিনার সৈনিক, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করেছি? তাহলে নাছির ভাই, নওফেল ভাই কার আদর্শ ধারণ করেছে? যদি উনারা শেখ হাসিনার সৈনিক হন, তাহলে উনাদের নাম বললেই আলাদা আলাদাভাবে স্লোগান হয় কেন? কীসের ঐক্যের ডাক? এটা ঐক্যের ডাক হতে পারে না।
রেজাউল করিম চৌধুরী
৫৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ১ টাকার অবৈধ সম্পদও অর্জন করেননি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ৫৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কোনদিন ১ টাকার অবৈধ সম্পদও অর্জন করিনি। কোনদিন অসৎ পথে যাইনি। সম্পদের পিছনে ছুটিনি। আজও বুকে হাত রেখে বলতে চাই কোনওদিন কোনও অনিয়মে যাব না। অবৈধ সম্পদ অর্জন করব না। শেখ হাসিনা যে আস্থা রেখে আমাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়ে মেয়র করেছেন তাঁর সেই আস্থার শতভাগ দাম দিয়ে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে টাকা দিলেই ব্যক্তির নামে স্লোগান হয়। ‘৭৫ এর আগে অনেকের নামে স্লোগান হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে সবাই চলে গেছে। সুবিধাবাদীরা পালিয়ে গেছে। সাধারণ কর্মীরা পার্টিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ‘৭২ সালে চট্টগ্রাম কলেজের সভাপতি ছিলাম আমি। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়, তখন আমি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।’
যুবলীগ চেয়ারম্যানকে ইঙ্গিত করে চসিক মেয়র বলেন, ‘আপনার শরীরে শেখ ফজলুল হক মণির রক্ত প্রবাহিত। মনে রাখবেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছি। এখনো চোখের সামনে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেসে ওঠে। আজকে ওই বসন্তের কোকিলেরা যুবলীগে বসার চেষ্টা করবে। ছাত্রলীগে বসার চেষ্টা করবে। তাই সুবিধাবাদী শ্রেণিকে পার্টি থেকে বিদায় করে ত্যাগীদের নিয়ে কমিটি করে সম্মেলন করুন।’
ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, আমাদেরকে আদর্শিক চর্চা করতে হবে। আদর্শিক চর্চা করতে হলে ব্যক্তি বিশেষের স্লোগান বর্জন করতে হবে। ব্যক্তি বিশেষ দিয়ে রাজনীতি হবে না। আগামী নির্বাচনে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অপরাজনীতির শক্তিকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে যুবলীগকে।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেয়ার ইতিহাস যাদের কাছে, তাদের নিয়ে যুবলীগের কমিটি গঠনের অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
নওফেল বলেন, ২০১৩ সালে যারা ধ্বংসাত্মক ও সহিংস রাজনীতি করে তখন হাতে লাঠি নিয়ে যুবলীগ জবাব দিয়েছে। কারা কোথায় কী করছে যুবলীগ সেসব তালিকা করে মোকাবিলা করেছে। সেজন্যই চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে যায়নি। শেখ হাসিনা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে যখন শেখ হাসিনাকে আক্রমণ করা হয়েছিল, গুলি করা হয়েছিল, তখন যুবলীগের কর্মীরা গুলি বুকে পেতে নিয়ে সামনে এগিয়ে এসেছিল। ‘৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে যুবলীগের কর্মীরা স্যালাইন নিয়ে গ্রামে গ্রামে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়েছিল।
নওফেল যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে অনুরোধ করে বলেন, যাদের ১৯৯১ ও ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস আছে তাদের কমিটিতে নিয়ে আসার অনুরোধ করছি। তারা কী করেছে সেই ইতিহাস যেন ঘেঁটে দেখা হয়। সেই সাথে যেন দেখা হয় যোগ্যতা, অভিজ্ঞতাও।
সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চুর সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। নগর যুবলীগের চার যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, মাহবুবুল হক সুমন ও দিদারুল আলম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা মঞ্চে ছিলেন।
নগর যুবলীগের বিদায়ী কমিটির তিন নেতা মহিউদ্দীন বাচ্চু, দেলোয়ার হোসেন খোকা ও ফরিদ মাহমুদ অনুষ্ঠানের মঞ্চেই আওয়ামী লীগের সদস্যপদ পূরণ করে শেখ ফজলুল করিম সেলিমের হাতে তুলে দেন। এর মধ্য দিয়ে তারা যুবলীগ থেকে বিদায়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তবে মাহবুবুল হক সুমন ও দিদারুল আলম আবার নগর যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে চন্দন ধরকে সভাপতি ও মশিউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর যুবলীগের কমিটি হয়। সেই কমিটি বিলুপ্ত করে ২০১৩ সালের ৯ জুলাই আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ১০১ সদস্যের কমিটির মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। এর মধ্যে সম্মেলন করে নিয়মিত কমিটি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল ৯ বছর পর।
বাংলাধারা/এএ













