বাংলাধারা প্রতিবেদক : চট্টগ্রামে চলমান ভয়াবহ তাপপ্রবাহে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। কয়েক দিন ধরে হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে লোডশেডিং ও পানির সংকট। বৈরী আবহাওয়া ও বিদ্যুৎ, পানির সংকটে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুরা।
এতে চট্টগ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। একদিকে জ্বালানি সমস্যায় কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, অন্যদিকে গরমের কারণে বেড়ে গেছে চাহিদা। উৎপাদন এবং চাহিদার মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি হওয়ায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং দেখা দিয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। সপ্তাহের সর্বোচ্চ গরমের দিনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের পাশপাশি ওয়াসায় পানি উৎপাদন কমে যাওয়ায় তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু-বৃদ্ধসহ নানা বয়সি মানুষ।
চট্টগ্রামে এখন তাপদাহ বইছে। গতকাল চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই সময়কার স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এছাড়া গতকাল নগরে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও গরমের অনুভূতি ছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মরুর দেশের তাপদাহের মতো। ভয়াবহ রকমের তাপদাহে দিনভর ছটফট করেছে মানুষ।
এরমধ্যে গতকাল নগরীর প্রায় সর্বত্র ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করা হয়েছে। বিদ্যুতের আনাগোনায় মানুষের ভোগান্তি আরো বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, কাপ্তাইয়ে পানি সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। একই সঙ্গে গ্যাস না থাকায় গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও উৎপাদনে ধস নেমেছে।
চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদিত না হওয়ায় চট্টগ্রামে গতকাল ১৩০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে একটি বড় অংশ লোডশেডিং করায় রাতে-দিনে বিদ্যুতের জন্য মানুষ হাহাকার করছে। চট্টগ্রামে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিং অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে সবখানে। দুই ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেয়া হয়, প্রতিবার লোডশেডিংয়ে কমপক্ষে একঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না। এমনকি রাত গভীরেও লোডশেডিং দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গ্যাস সংকটের সুরাহা এবং ভারি বৃষ্টিপাত না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। তবে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ মিলছে ২৫০-৩০০ মেগাওয়াট কম। এজন্য সূচি মেনে লোডশেডিং করা যাচ্ছে না।
পিডিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে চাহিদার চেয়ে ২৫০-৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ চাহিদা কমে আসবে। তখন লোডশেডিং কমবে।
দাবদাহ এবং লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি নগরবাসীকে পানির জন্যও হাহাকার করতে হচ্ছে। পানি উৎপাদন কমে যাওয়ায় নগরবাসী প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না। লবণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওয়াসার পানি উৎপাদন বহুলাংশে কমে গেছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রামে দৈনিক ১৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমেছে। ভারি বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। কাপ্তাই লেক থেকে পানি প্রবাহ না বাড়লে লবণের তীব্রতা কমবে না। এমতাবস্থায় পানির উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে না। তবে ওয়াসা ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।













