৩ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রামে স্বপ্নবাজ তরুণদের ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার’

মুহাম্মদ আব্দুল আলী »

মহামারি করোনা ভাইরাসের এই বৈশ্বিক দুযোর্গে অসহায় হয়ে পড়েছে সবাই। চারিদিকে লাশ হচ্ছে মানুষ। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে যুদ্ধ হিসাবেই ঘোষণা এসেছে। কিন্তু জনবল, অবকাঠামো ও উপকরণ সঙ্কটে গৃহীত পদক্ষেপ যেন অসম যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় এ মহাযুদ্ধে সম্পৃক্ত হতে চান তরুণ প্রজন্ম। 

চট্টগ্রামের কিছু তরুণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম’ ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারের উদ্যোগ নিয়েছেন। এখানে কম এবং মাঝারি উপসর্গ আছে এমন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন সেবা দেওয়া হবে। করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে তারা মনে করেন, এই অবস্থায় আর বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সাবেক এই ছাত্রনেতারা।

করোনা আক্রান্তদের জন্য এই আইসোলেশন সেন্টারে থাকবে অক্সিজেন সাপোর্ট, স্বাভাবিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, থাকবে ভালোবাসাময় সেবা। কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে করোনাজয়ে সাহস সঞ্চারের পাশাপাশি তার আইসোলেশন নিশ্চিত করা হবে। একজন প্রফেসরের অধীনে বেশ কিছু এমবিবিএস ডাক্তার ও সেবিকা থাকবে বলে জানিয়েছেন ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম’র তরুণ উদ্যোক্তারা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক চর্ম ও যৌন রোগের বিভাগীয় প্রধান ও ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম’র উপদেষ্টা প্রফেসর এ কে এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, যেভাবে রোগী বাড়ছে বেডের সংকোলান হচ্ছে না, আর সব রোগী বেডে রাখে না। প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ রোগী বাসায় থেকেই চিকিৎসা করতে পারে। কিন্তু আইসোলেশনে তো আলাদা রুম লাগবে, আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে, এটাতো অনেকের বাসায় সম্ভব না।

আইসোলেশন সেন্টার তৈরির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের থাকে প্রায় দু’টো রুম, একটি রুম আইসোলেশন থাকলে আরেকটিতে অন্যদের পক্ষে থাকা সম্ভব হয় না। যদি আইসোলেশনের জন্য আলাদা হওয়া যায় তাহলে পরিবারের সদস্যদের জন্য সুবিধা হয়। মূলত পারিবারিক ঝামেলা ও হাসপাতালের রোগীর চাপ কমানোর কথা চিন্তা করেই আমরা এই আইসোলেশন সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছি।

তরুণ উদ্যোক্তাদের মুখপাত্র হিসেবে মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বৈশ্বিক এই দুযোর্গে আমরা সবাই অসহায় হয়ে পড়েছি। আগামী ১৫ দিন পরে কি হবে কেউ জানিনা। এই অবস্থায় আমাদের আর বসে থাকার সুযোগ নেই। আসুন আমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে মানুষের পাশে দাঁড়াই।’

‘আমরা একশ জন থাকতে পারবে এমন একটা আইসোলেশন সেন্টার করতে চাই। যেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট থাকবে, স্বাভাবিক চিকিৎসাগুলো হবে, থাকবে ভালোবাসাময় সেবা।’

এটি কোন আত্মপ্রচারমূলক প্রকল্প নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা কোন আত্মপ্রচার প্রকল্প হবেনা। আমরা করেছি বলে আমিত্ব জাহিরের কোন প্রকল্প হবেনা। এটা সত্যিকার অর্থে মানুষের জন্য একটা সেবার জায়গা হবে। সেখানে করোনা রুগীরা খাবে, চিকিৎসা পাবে, সেবা পাবে, মানসিক সাপোর্ট পাবে।’

সাবেক এই ছাত্রনেতা তরুণদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগে সাথে যদি কেউ সারথী হতে চান, তাহলে হাত তুলুন। আমরা একশ জনের দায়িত্ব নিতে চাই। আপনি কতজনের দায়িত্ব নেবেন? আসুন একসঙ্গে কাজ করি। আমাদের শক্তিগুলো এক জায়গায় করি। ভালোবাসাগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করি। ঐক্যবদ্ধ ভালোবাসার শক্তি অনেক বড় শক্তি।’

সাবেক ছাত্রনেতা নূরুল আজিম রনি তার ফেসবুক পেইজে লিখেন, ‘চট্টগ্রামের কিছু স্বপ্নবাজ তরুণের উদ্যোগে নগরীর হালিশহরে করোনা আক্রান্তদের জন্য তৈরী হতে যাচ্ছে নতুন ‘আইসোলেশন সেন্টার’। অন্তত ১০০ রোগীকে আইসোলেটেড করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই ‘আইসোলেশন সেন্টার’ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সম্পূর্ন তিনতলা একটি ভবনকে আইসোলেশন সেন্টারে রুপান্তরের জন্য ১০০ মেডিকেল বেড তৈরির কাজ চলছে।’

‘এই আইসোলেশন সেন্টারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের কিছু মানুষকে আমরা বাঁচাতে চাই। এখানে থাকবেনা কোন রাজনৈতিক মত পার্থক্য। এখানে থাকবে শুধুই করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির অভিন্ন শপথ। স্বপ্নবাজ তরুনদের এ উদ্যোগের পাশে আশীর্বাদ হয়ে সাথে থাকুন। করোনামুক্ত একটি সকালের প্রত্যাশায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এগিয়ে যাবো।’

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন