বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আলোচিত চেক প্রতারণা মামলায় হাবিব গ্রুপের দুই কর্ণধার মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী ও মোহাম্মদ ইয়াসিন আলীকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। তবে তারা রায় ঘোষণার সময়ও ছিলেন পলাতক।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) চট্টগ্রামের চতুর্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ মুহাম্মদ আবু আমর এ রায় দেন। রায়ে দণ্ডিত ইয়াকুব আলী হাবিব স্টিল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং ইয়াসিন আলী ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটি হাবিব গ্রুপের অধীন, যার মালিকানায় এক সময় দেশের অন্যতম বেসরকারি বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজসহ ২১টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল।
প্রতারণার প্রক্রিয়া: ব্যাংক ঋণ, চেক, ডিজঅনার ও মামলা
মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, হাবিব স্টিলের নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখা থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেন দুই ভাই। ঋণের বিপরীতে ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ২০ কোটি টাকার একটি চেক দেওয়া হয়, যা জমা দেওয়ার পর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ‘অপর্যাপ্ত তহবিল’-এর কারণে ডিজঅনার হয়।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইনি নোটিশ পাঠানো হলেও কোনো সমাধান না আসায় একই বছরের ১৭ অক্টোবর চেক প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন ব্যাংকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুসরাত আরা হীরা।
কিন্তু সমন জারি করেও আদালতে হাজির করানো যায়নি আসামিদের। বিচার চলে অনুপস্থিতিতেই। সাক্ষ্য ও যুক্তিতর্কের পর আদালত দুই আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
দণ্ডিত দুই ভাই বর্তমানে বিদেশে পলাতক বলে জানিয়েছেন মামলার আইনজীবী। এ অবস্থায়, আদালতের দেওয়া সাজা কবে কার্যকর হবে, আদৌ আদায়যোগ্য হবে কি না—তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায় আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে এক ধরনের বার্তা দিলেও, বাস্তবতা হচ্ছে—দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ঋণখেলাপিদের ফিরিয়ে আনতে বা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে বাংলাদেশ এখনো যথেষ্ট কার্যকর কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর পেছনে দায়ী বড় মাপের করপোরেট ঋণগ্রহীতাদের অর্থ আত্মসাৎ ও রাজনৈতিক/প্রশাসনিক প্রভাব বলে মনে করা হয়।
হাবিব গ্রুপের বিরুদ্ধেও শত শত কোটি টাকার ঋণ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আছে। মহামারি করোনাকালে ব্যবসায়িক লোকসানের অজুহাতে তারা দেশের ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেলে চলে যান বলে অভিযোগ উঠে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায় যতটা না ন্যায়বিচারের প্রতিফলন, তার চেয়েও বেশি একটি অদৃশ্য দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ—যেখানে বড় করপোরেট অপরাধীরা আইনের আওতায় এলেও, বাস্তবে তাদের সম্পদ পুনরুদ্ধার বা বিচার কার্যকর করা যাচ্ছে না।