বাংলাধারা প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জন নারী নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। করোনাকালেও যৌন হয়রানির বিচারহীনতার কারণে নারীর প্রতি বেড়েছে সহিংসতা। ধর্ষণের পাশাপাশি বেড়েছে হত্যা ও আত্মহত্যার প্রবনতা। বাড়ছে পারিবারিক নির্যাতনও।
ওর্য়াল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের এক রিপোর্টে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতিদিন যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। প্রতি ঘণ্টায় তিনজন নারী কোনো না কোনোভাবে শিকার হচ্ছে যৌন হয়রানির। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী, গামের্ন্টস কর্মী ও বিভিন্ন কর্মজীবী নারীরা যাতায়াতের পথে নানাভাবে এ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এরমধ্যে অনেকগুলো ঘটনা আলোচনায় আসেনা লোক লজ্জার ভয়ে।
জরিপে আরো দেখা যায়, স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ৮৭ দশমিক ৭ শতাংশ নারী। মানসিক নির্যাতনের শিকার ৮১ দশকিম ৬ শতাংশ, অর্থনৈতিকভাবে ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ ও ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ নারী শারীরিক নির্যাতনে শিকার হচ্ছেন।
চট্টগ্রামে যৌন হয়রানির প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করে সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিএসডিএফ)। তাদের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, শুধু চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জন নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এরমধ্যে বেশিরভাগই গামের্ন্টস কর্মী। এ কর্মীদের সুরক্ষা নেই কর্মক্ষেত্রে ও কর্মক্ষেত্রে যাতাযাতের সময়ও। আর কোনো রকম প্রতিবাদ ছাড়াই নিরবে সহ্য করে প্রায় ৯৫ ভাগ নারী গামের্ন্টস কর্মী।
এবিষয় চিটাগাং সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরামের প্রোজেক্ট কো-অডিনেটর (সিএসডিএফ) শম্পা কে নাহার বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই নারীর ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন চলে আসছে। বাংলাদেশে নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানি প্রতিদিনকার ঘটনা। যৌন হয়রানির মত ভয়ঙ্কর এ অপরাধের বেশির ভাগই বিচারহীনতার বাইরে থাকে। এছাড়া নারীরা লোক লজ্জার ভয়ে প্রকাশ করতে পারে না। এতে করে তারা আরো অপরাধে উৎসাহি হয়ে উঠে। এক্ষত্রে আমাদের মেয়েরা যেমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন তেমনি নষ্ট হয়ে হচ্ছে পুরুষ সন্তানরা। তাই সমাজ থেকে যৌন হয়রানিমূলক খারাপ অভ্যাসটি প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। এতে নারীরা নিরাপদ জীবনঝাপন করতে পারবে ও পুরুষ সন্তানরা সুশিক্ষা অর্জন করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেখতে পাই করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা আরো বেড়েছে। কারণ অনেক নারী বৈশ্বিক মহামারী করোনায় চাকরি হারিয়েছেন। সংসারে অভাব দেখা দিয়েছে। তাই শুধু বাইরেই নয় সমানভাবে ঘরেরও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারীরা। নারীর প্রতি এ নির্যাতন শুধু যৌন হয়রানিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সব দিক থেকেই নির্যাতিত নারীরা। তাই স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী নারীদের নিরাপত্তায় যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। তাহলে হয়তো কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এছাড়া সমাজের সর্বোস্তরে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
আজ ১৩ জুন নারী উত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো ১৩ জুন ব্যাপকভাবে ‘নারী উত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস’ পালন করা হয়। সে বছর দিবসটি জাতীয়ভাবে পালন করা হয়েছিল। বিশেষ করে স্কুল ছাত্রীদের প্রতি বখাটেদের উত্যক্তকরণে নেয়া হয়েছিল তাগিদ ও কর্মসূচি। এর পরের বছরও দিবসটি সবার মাঝে আলোড়ন তোলে। কিন্তু চলতি বছর দিবসটি ঘিরে উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি নেয়া হয়নি চট্টগ্রামে।
তবে শুক্রবার (১১ জুন) দিবসটি উপলক্ষে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি ভার্চুয়াল কর্মশালার আয়োজন করেছে। ‘স্টেপ আপ, স্পিক আউট: এ কম্প্রিহেন্সিভ আন্ডারস্ট্যান্ডিং ফর এওয়ার্নেস অ্যান্ড প্রিভেনশন অব ক্যাম্পাস সেস্কুয়াল ভায়োলেন্স’ নামে একটি অনলাইন অনুষ্ঠান করেন। সেশনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কানাডার কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটিতে সোশ্যাল এন্ড কালচারাল এনালাইসিসের ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওম্যান এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের সহকারি অধ্যাপক আবু সালেহ মোহাম্মদ সোয়াদ।
এসময় সেমিনারে তিনি বলেন, সুশিক্ষার সাথে লেখাপড়ার সুষ্ঠু ও নির্মল পরিবেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নারীদের বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের অভাব রয়েছে। যৌন হয়রানি, সন্ত্রাস ও সহিংসতা বাংলাদেশের নারী অগ্রগতির অন্যতম অন্তরায়। কিন্তু দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোল অর্জনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত অত্যন্ত জরুরি।
এদিকে ‘করোনা মহামারীতে যৌন হয়রানি ও তরুণ সমাজ’ নামের শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন চিটাগাং সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিএসডিএফ)। এসময় সভায় বক্তারা বলেন, সরকার, বিরোধী দল ও সরকারের বিভিন্ন পদে নারীরা আসীন হলেও নারী এখনও পুরোপুরি তার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। পরিবারে পুরুষ তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতনের মতো ঘটনার বিচারহীনতার কারনে বিভিন্ন ভাবে নারীরা ঘরে বাইরে নির্যাতিত হচ্ছে। যার জলজ্যান্ত দৃষ্ঠান্ত সুবর্নচরে দলবেধে নারী ধর্ষন, গাজীপুরে চলন্ত বাসে নারী ধর্ষণ।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













