১০ ডিসেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরে অচলাবস্থার হুমকি, অফডকগুলোর কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত

আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিতাংশ হিসেবে পরিচিত বেসরকারি কনটেইনার ডিপো বা অফডকগুলো এবার অঘোষিতভাবে কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা থেকে রপ্তানিপণ্য জাহাজীকরণ ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে ডিপো মালিকরা। এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বন্দর কর্তৃপক্ষ বা বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাউকেই আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়নি।

ডিপো মালিকদের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের রপ্তানি কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়বে। বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, দেশের ১০০ শতাংশ রপ্তানিপণ্য, বিপুল পরিমাণ খালি কনটেইনার এবং ৬৫ ধরনের আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো। ফলে অফডকের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে রপ্তানিমুখী শিল্প, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। এমনকি জাতীয় অর্থনীতিতেও বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

অফডক মালিকদের সংগঠন বিকডা আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে কনটেইনার স্টাফিং, গ্রাউন্ড রেন্ট, লিফট অফ–লিফট অন, ডকুমেন্টেশন এবং বন্দর থেকে অফডকগামী পরিবহনের নতুন ট্যারিফ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। নতুন মাশুল ৩০ থেকে ৬৩ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলে বন্দর ব্যবহারকারীরা তীব্র আপত্তি জানান। আলোচনার উদ্যোগে কোনো সমাধান না আসায় বিষয়টি আদালতে গড়ায় এবং আদালত বর্ধিত মাশুল আদায় স্থগিতের নির্দেশ দেন।

এরপরও সমন্বয়ের চেষ্টা চালায় বন্দর কর্তৃপক্ষ, কিন্তু দুপক্ষই নিজ অবস্থানে অনড় থাকে। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় জানিয়ে দেয়, ট্যারিফ কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া অফডক কর্তৃপক্ষ কোনো অতিরিক্ত মাশুল আদায় করতে পারবে না। এতে ক্ষুব্ধ মালিকপক্ষ তিন মাস পর নতুন কৌশল নিয়েছে ঘোষণা ছাড়াই কার্যক্রম বন্ধ রাখা।

জানা গেছে, বড় শিপিং লাইনগুলোকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে ১২ ডিসেম্বর থেকে যেন কোনো কনটেইনার পাঠানো না হয়। তবে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন কিংবা বন্দর কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি।

বিকডার সেক্রেটারি রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ‘বহু বছর ধরে অফডকের মাশুল বাড়ানো হয়নি। কিন্তু সব খাতে খরচ বেড়েছে। আদালতের কারণে বাড়তি মাশুল আদায় করতে না পারায় লোকসানে পড়েছে সব প্রতিষ্ঠান। তাই ডিপো মালিকরা আপাতত রপ্তানি ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ তিনি দাবি করেন, এ সিদ্ধান্ত বিকডার নয়, ব্যক্তিগতভাবে ডিপো মালিকদের।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘অফডক বন্দরের একটি অংশ। আইসিডি নীতিমালা অনুযায়ী ট্যারিফ নির্ধারণে কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া একতরফাভাবে মাশুল বাড়ানো সম্ভব নয়। কোনো নোটিস ছাড়াই একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। ১২ ডিসেম্বর থেকে কাজ বন্ধ হবে এ তথ্যও বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি।’

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের অঘোষিত সিদ্ধান্ত দেশের ভাবমর্যাদার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।’

বিজিএমইএর সহসভাপতি রফিক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বায়াররা নিজেরাই অফডক নির্ধারণ করে দেন। তাই কোনো নোটিস ছাড়া ডিপো মালিকদের কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত সরাসরি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সংকটে ফেলবে।’

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ