২৪ অক্টোবর ২০২৫

চবিতে আন্দোলনের শততম দিনে ‘ছাত্রলীগের হামলা’

চবি প্রতিনিধি »

চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা শততম দিনের আন্দোলনে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান করলে বাধা দেয় ছাত্রলীগ। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার পাশাপাশি সাংবাদিকদের হেনস্তা করে, এমনকি সাংবাদিকদের পরবর্তীতে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয় তারা।

মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের  ১০০তম দিনের চিত্র এটি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনের ইন্ধনে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে।

জানা যায়, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করার দাবিতে ৯৯ দিন আন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও গণস্বাক্ষরের ডাক দেয় চারুকলার শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান করে শুরু করেন গণস্বাক্ষর কর্মসূচি। সেখানে প্রায় আধাঘণ্ট অবস্থানের পর তাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে চবি শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) ও বাংলার মুখের (বিএম) নেতাকর্মীরা। ভিএক্স ও বিএম সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

আন্দোলনরত চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, তারা সকাল ১০টার সময় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান করলে হঠাৎ করে ছাত্রলীগের ৭০/৮০ জন নেতাকর্মী এসে তাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে বলে। তারা শহীদ মিনার থেকে সরে যেতে রাজি না হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের হাতে থাকা ব্যানার ও পোস্টার জোরপূর্বক কেড়ে নেয় ও তাদের ওপর চড়াও হয়। দীর্ঘক্ষণ বাকবিতণ্ডার পর ছাত্রলীগের ছেলেরা আন্দোলনকারীদের টানা হেঁচড়া শুরু করে ও তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের শারীরিকভাবে হেনস্থা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। গণস্বাক্ষরের সাদা কাপড়, শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা ব্যানারগুলো নিয়ে চলে যায় ছাত্রলীগ। চারুকলার শিক্ষার্থীদের সাথে হাতাহাতিও করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে শহীদ মিনার ছাড়তে বাধ্য হয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে অবস্থান নেন জিরো পয়েন্টে। সেখান থেকে তারা প্রক্টর অফিসে এসে তাদের ওপর অতর্কিত হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।এসময় শিক্ষার্থীরা প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান নেন ও বিভিন্ন স্লোগান দেন।

চারুকলা ইন্সটিটিউটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জহির রায়হান বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। আমরা অন্যান্য সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অনুরোধ করেছি। হঠাৎ করে কয়েকজন ছাত্ররা এসে আমাদের আন্দোলনে বাধা দেয়।আমাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে তারা আমাদের কয়েকজনকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায় ও মারধর করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের ইন্ধনে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করেছে। এটা লজ্জার বিষয়। সব শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবির বিপক্ষে ছাত্রলীগের এমন কাজ নিন্দনীয়। এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

একই সময়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চড়াও হয় সাংবাদিকদের ওপর, বাধা দেয় দায়িত্ব পালনে।কর্তব্যরত সাংবাদিকরা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে থাকলে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী সাংবাদিকদেরকে হুমকি দেয় ও মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ছাত্রলীগের ছেলেরা আর টিভির চিত্র সাংবাদিক এমরাউল কায়েস মিঠুর সাথে ধাক্কাধাক্কি করে, সমকাল পত্রিকার নারী সাংবাদিক মারজান আখতারকে হেনস্থা করে।

ভুক্তভোগী মারজান আখতার বলেন, ‘আমি সাংবাদিকতা দায়িত্ব পালনকালে ছাত্রলীগের ভার্সিটি এক্সপ্রেস গ্রুপের নেতা-কর্মীরা আমার সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। প্রথম থেকে তারা আমাকে ভিডিও করতে বাধা দেয় । এক পর্যায়ে তারা আমাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে ও  ভিডিও ফুটেজ ডিলিট করতে বলে। ডিলিট না করতে চাইলে তারা আমাকে হুমকি দিতে থাকে। তারা পিছন থেকে আমার ব্যাগ টান দেয়। হুমকি দিয়ে বলে আমার নিরাপত্তা পরে দেখে নিবে ওরা।’

বিএম গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু বকর তোহা আন্দোলনে বাধা দেওয়া ও সাংবাদিকদের হেনস্থার বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানান।

জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে কেউ এ কাজ করে থাকে তবে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেবো, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও বিচারের দাবি জানাবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এস এম জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সম্পর্কে সাংবাদিকদের থেকে জেনেছি। চারুকলার শিক্ষার্থীরা ও সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিব।’ তবে চারুকলা ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হবে কিনা সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।

আরও পড়ুন