সাদমান সময়, মিরসরাই প্রতিনিধি »
বাঙালীর মহান মুক্তিসংগ্রামের ৯ মাস প্রেরণাদানকারী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক প্রফেসর ডা. সুলতানুল আলম করোনা আক্রান্ত হয়ে চির বিদায় নিলেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অথচ বিদায় বেলায়ও তিনি পাননি মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি। দেয়া হয়নি গার্ড অব অনার।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান জানান, প্রফেসর ডা. সুলতানুল আলম মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে অন্তর্ভূক্ত হননি তাই গার্ড অব অনার দেয়া যায়নি। তবে তাঁর জানাযায় প্রশাসন ও পুলিশ উপস্থিত ছিলেন।
রবিবার (১৪ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টায় তিনি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সোমবার (১৫ মার্চ) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিকাল ৪টায় তাঁর নিজ গ্রাম মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার কাটাছরা ইউনিয়নের কাটাছরা গ্রামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। মিরসরাইয়ের জানাযায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম নগরীর পার্কভিউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২১ ফেব্রুয়ারি প্রফেসর ডা. সুলতানুল আলম করোনা পজিটিভ হন । এর দুদিন পর ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় । শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১২ মার্চ তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়। সেখানে রোববার দিবাগত রাত ৩ টায় মৃত্যুবরণ করেন এই গুণী চিকিৎসক।
শব্দ সৈনিক প্রফেসর ডা. সুলতানুল আলমের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহম্মদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে যে কয়টি যাছাই বাছাইয়ের সুযোগ এসেছে কখনো তিনি আবেদন জমা দেননি। যদি আবেদন পেতাম আমরা অবশ্যই চেষ্টা করতাম।’
তবে মিরসরাইয়ের আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডা. জামসেদ আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি প্রফেসর ডা. সুলতানুল আলম, রাখাল চন্দ্র বণিকসহ অসংখ্য শব্দ সৈনিক স্বাধীন বাংলা বেতারের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। কেন তাঁর স্বীকৃতি হলো না এ ব্যাপারে ক্ষোভ আর পরিতাপ জানানো ছাড়া আমাদের বলার কিছুই নেই।’
এদিকে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একক সংখ্যা গরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাধীন বাংলা বেতার কন্দ্রে অংশগ্রহণকারী এবং মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠনের এই শব্দ সৈনিকদের কয়েক দফা মোট ২৫৩জনকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। যার মধ্যে প্রফেসর ডা. সুলতানুল আলমের নাম নেই।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ কালরাতে দশজন সাহসী সৈনিকের উদ্যোগে চট্টগ্রামের কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। ৩০ মার্চ সেখান থেকেই প্রথমবারের মত শোনা যায় ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়।’ ওইদিন দুপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় এ বেতার কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কালুরঘাট পতনের পর শব্দযোদ্ধাদের দুটি দলের চেষ্টায় আগরতলা ও ত্রিপুরার বিভিন্ন জায়গা থেকে বেতার কেন্দ্রের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হয়। ১০ এপ্রিল মুজিব নগরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হওয়ার পর ভারত সরকারের সহায়তায় কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড থেকে সম্প্রচার শুরু হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













