২৮ অক্টোবর ২০২৫

চসিকের গৃহকর বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি ক্যাবের

বাংলাধারা প্রতিবেদক »

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নতুন করে গৃহকর পুনঃমুল্যায়নের নামেগৃহকর এর পরিমান এক লাফে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ আশি হাজার টাকায় হওয়া, গৃহকর নির্ধারনে ভাড়া আদায়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারনের প্রক্রিয়ার কারনে সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স এখন বাড়ীর মালিকের কাছে আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গৃহকৃর নির্ধারনে এক লাফে এতো কর বৃদ্ধি  গ্রহণযোগ্য নয়।

রোববার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি করে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর নেতৃবৃন্দ।

বিবৃতিতে তারা জানায়, এভাবে গৃহ কর বৃদ্ধি করা হলে তার পুরো দায়ভার গিয়ে পড়বে ভাটাটিয়াদের উপর। করোনাসহ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সাধারন মানুষ এমনিতেই নিত্যপণ্য, সেবা সার্ভিসের মূল্যবৃদ্ধি, ভ্যাট, ট্যাক্সসহ নানা ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের ভারে জর্জরিত। সেখানে সিটিকর্পোরেশনের গৃহকরের এক ধাপে ১০গুনের বেশী বৃদ্ধি মানুষের ভোগান্তির নতুন মাত্রা যোগ করবে। যা পুরো নগরবাসীর জীবন যাত্রার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং যা বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তাকে হুমকির মুখে ফেলবে। তাই অনতিবিলম্বে বর্তমানে চলমান গৃহকর আদায় প্রক্রিয়া বন্ধ করে বাড়িভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর মূল্যায় না করে, সম্পত্তির অবস্থান, বর্গফুট, গুণগত মান এবং কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যই হতে হবে গৃহকর নির্ধারণ, দেশের সব সিটি করপোরেশনের গৃহকর নির্ধারণের পদ্ধতিকে ইউনিফর্ম পদ্ধতিতে নিয়ে আসার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করে ধাপে ধাপে কর বৃদ্ধি ও কর মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে কর আদায়কে জনবান্ধব করার দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি।

ক্যাব জানায়,  প্রয়োজনে ১৯৮৬ সালের ‘দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস’ অনুসরণে বাংলাদেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে গৃহকর নির্ধারণের উদ্যোগ নিতে ভারতের মুম্বাই, দিল্লি, কলকাতা ও চেন্নাইয়ের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের লন্ডন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরীতে বিদ্যমান পদ্ধতির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নতুন আইনর প্রণয়ন করে কমিশন গঠন করতে হবে। এভাবে এক লাফে বিপুল পরিমান কর আদায় যেভাবে গ্রহনযোগ্য নয়, তেমনি সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান নাগরিক সেবার মানও কর প্রদানের সাথে জড়িত। বিশেষ করে নগর জুড়ে ভাঙ্গা রাস্তা নগরবাসীর জন্য যেমনি যন্ত্রণার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমনি যত্রতত্র ময়লার স্তুপ পুরো নগরী যেন আবর্জনার ডিপোতে পরিনত হয়েছে। ধুলাবালির যন্ত্রণায় সর্দি, কাশি, হাপানী ও শ্বাস কষ্ঠের প্রার্দুভাব অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। নাগরিক সেবা প্রদানে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলি সমন্বয়ের অভাবে যে যেভাবে পারে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলি নগবাসীর জন্য আর্শীবাদ না হয়ে অভিশাপে পরিনত হয়েছে। অন্যদিকে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরী না করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করা, সিংহভাগ জনগোষ্ঠির কথা চিন্তা না করেগুটি কয়েক লোকের কথা চিন্তা করে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করায় সাধারন জনগন এ সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। যার দায় ভার সিটি কর্পোরেশনের উপর পড়ছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতিপূর্বে ক্যাব চট্টগ্রাম সাবেক মাননীয় মেয়রদের সাথে বেশ কয়েকবার মতবিনিময়ের সময় সিটি কর্পোরেশনের কর ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কথা উত্থাপন করলেও তার কোন উন্নয়ন হয়নি। হোল্ডিং ট্যাক্স মূল্যায়নের সময় বাড়ির মালিকের উপস্থিতিতে তথ্য যাচাই দরকার ছিলো। অন্যদিকে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে প্রতিবছর সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগের লোকজন বিভিন্ন বাড়ির মালিককে বিশাল বিশাল অংকের হোল্ডিং ট্যাক্সের নোটিশ দিয়ে থাকেন এবং কর্পোরেশনে গিয়ে আপিল করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেখানে আপোষ ফর্মুলায় নোটিশের ১-৩ ভাগ বা যে যেভাবে পারে রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে খুশি করতে পারলেই এখান থেকে রেহাই পাওয়া যায়। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে নীতিমালা না মেনে চলার কারনে ১০ গুনের বেশী হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের নোটিশ দেয়া হচ্ছে এবং পরবর্তীতে আপোষ-রফার মাধ্যমে তা নিস্পত্তি করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ক্যাব সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের উপস্থিতিতে গণশুনানির ব্যবস্থার দাবি করলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি। এছাড়াও বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ খাতে সরকারের পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন ও ক্রেতা-ভোক্তা হিসাবে প্রতারিত হলে যথাযথ আইনি ক্ষতিপূরণ পাবার জন্য বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ এর আশু সংশোধণ দরকার।

নগরীতে বাড়ীর মালিক ও ভাড়াটিয়াদের ডাটাবেস থাকা না থাকায় হোল্ডিং ট্যাক্স সহ অন্যান্য ট্যাক্স আদায়ে প্রতিনিয়তই ভোগান্তির মাত্রা বাড়ছে। তাই সিটিকর্পোরেশন গৃহকর আদায়ে নোটিশ প্রদান প্রক্রিয়া, হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারন, আদায় ইত্যাদি সব প্রক্রিয়া ডিটিজাইজড করা হলে এখাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম অনেকাংশে কমে যাবে।

আরও পড়ুন