৩০ অক্টোবর ২০২৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ

বাংলাধারা ডেস্ক »  

চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের এই দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পার্শ্বে মহানন্দা নদীর তীরবর্তী গ্রাম রেহায়চর এলাকায় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংগঠিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর  সঙ্গে  লড়াই করে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে শত্রুমুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

১৯৭১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যান্য এলাকা মুক্ত হয়ে গেলেও  শহর ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় শত্রু সেনাদের দখলে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর শত্রুমুক্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয় ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে।

১৩ ডিসেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর শহর মুক্ত করতে কয়েকটি নৌকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে রেহায়চর এলাকায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। সম্মুখযুদ্ধে একের পর এক পরাস্ত করতে থাকেন শত্রু বাহিনীকে। ১৪ ডিসেম্বর রাতের আধার কেটে সকালে সূর্য ওঠার আগেই নির্ভিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাহাঙ্গীর সহযোদ্ধাদের নিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে চলেন এবং ধ্বংস করে দেন শত্রু বাহিনী ১৮টি ট্রেঞ্চ ও ২০ থেকে ২২ টি বাংকার।

জাহাঙ্গীরের দুঃসাহসিক ও দুরন্ত আক্রমণে শত্রু বাহিনী তাদের আস্তানা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। রেহায়চর ঘাটের কাছেই শত্রু বাহিনীর সর্বশেষ বাংকারটি দখল করতে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে এগোতে থাকার সময় হঠাৎ শত্রু বাহিনীর একটি গুলি এসে লাগে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের কপালে। লুটিয়ে পড়েন মাটিতে  বীর বাঙালির এই সন্তান। সেখানেই শাহাদাৎ বরণ করেন তিনি।

পরের দিন শহীদ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরকে দাফন করা হয় হযরত শাহ নেয়ামাত উল্লাহ (রহঃ)-এর পুণ্যভূমি বাংলার পুরাতন রাজধানী গৌড়ের সোনামসজিদ চত্বরে। এরপর আর কোন যুদ্ধ হয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। মুক্ত হয়ে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তবে ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত হলেও ১৫ই ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে মুক্তি সমাবেশ করা হয়। সেই হিসেবে ১৫ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস বলছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত করতে গিয়ে শহীদ হওয়া এই বীর সন্তানের নামে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় । মহানন্দা নদীর উপর নির্মিত ব্রিজটির নামকরণ করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে। ব্রিজ চত্বরে বারঘরিয়া নামক স্থানে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতি স্তম্ভও তৈরী করা হয়। একটি পিস্তলের উপর ২টি শান্তির পায়রা খঁচিত স্তম্ভটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে ।

২০১১ সালে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের শহীদ স্থলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঠিক দু’দিন আগে, ১৪ ডিসেম্বর  চাঁপাইনবাবগঞ্জ শত্রু মুক্ত করতে গিয়ে শহীদ হন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। প্রতি বছর এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা ও জেলা প্রশাসন বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করে আসছেন।

ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ সালে বরিশালের রহিমগঞ্জে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে মুলাদী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবং ১৯৬২ সালে মুলাদী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ট্যালেন্ট পুলে জুনিয়ার বৃত্তি লাভ করেন। একই বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ সালে গণিতে লেটার মার্কসহ এসএসসি পাশ করেন।

১৯৬৬ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আবারও গণিতে লেটার মার্কসহ এইচ এসসি পাশ করেন। এর পর ‘৬৭ সালের ৫ অক্টোবর কাকুল পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন তিনি। নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৬৮ সালের ২ জুন কমিশন প্রাপ্ত হন। ৬ মাস চাকুরী করার পর তিনি রিসালপুরস্থ মিলিটারি কলেজ অভ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যোগদান করেন এবং ১৩ মাসের ব্যাসিক কোর্সে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ন হন।

এরপর সেখান হতে বোম্ব ডিস্পোজাল কোর্স করেন এবং কোর অব ইঞ্জিনিয়ারর্স এর একজন সুদক্ষ অফিসার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সুনাম অর্জন করেন।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন