২৪ অক্টোবর ২০২৫

চিংড়ি পোনা পাচার হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»

চট্টগ্রাম থেকে চিংড়ি পোনা পাচার হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। নদী ও সমুদ্র থেকে এসব চিংড়ি পোনা অবৈধভাবে ধরা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পাচারকারীরা অতি মুনাফা অর্জনের নেশায় মেতে উঠেছে। ২০১৭ সালের পর আর কোন অভিযান হয়নি। ফলে দেদারসে পাচার হচ্ছে হোয়াইট গোল্ড খ্যাত চিংড়ী পোনা। অভিযোগ রয়েছে, রাস্তায় মেট্টো ও জেলা পুলিশের চেক পোস্ট থাকার পরও কিভাবে এসব পোনা পাচার হচ্ছে। এসব মূল্যবান পোনা পাচারের পেছনে যারা কাজ করছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কোন পদক্ষেপ না নেয়া হলে চট্টগ্রামের মৎস্য সম্পদ ও ব্যবসা ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মৎস্য সম্পদকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। সিন্ডিকেট করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মিঠা পানির চিংড়ি পোনার পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ সমুদ্র উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা থেকে চিংড়ি পোনা দ্রুতগামী পরিবহণের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ড্রামে করে সংগ্রহ করছে। বিশেষ করে খুলনাকেন্দ্রিক চিংড়ি ঘেরগুলোতে সামুদ্রিক চিংড়ির কদর বেশি থাকায় চট্টগ্রামের ওপর এসব সিন্ডিকেটের ওপর নজরদারি অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, বিশেষ করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চল থেকে পিকআপে করে চিংড়ি পোনা পাচার হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। মশারি জাল দিয়ে নদী ও সমুদ্র থেকে এসব পোনা ধরতে গিয়ে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ধরা হচ্ছে।

মূলত, একমাত্র চিংড়ি পোনা ছাড়া অন্য জাতের পোনাগুলো দীর্ঘ সময় পরিবহণযোগ্য না হওয়ার কারণে পথিমধ্যে মরে যাচ্ছে। তবে সিন্ডিকেটের টার্গেট করে চিংড়ি পোনা নদী ও সমুদ্র থেকে হাতছাড়া হলেও ঘের মালিকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে এসব চিংড়ি পোনার হাজার দেড় হাজার টাকা হলেও দক্ষিণাঞ্চলে এসব চিংড়ি পোনা প্রতি হাজার ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সড়ক পথে দ্রুতগামী পিকআপ ও মিনি ট্রাকযোগে কক্সবাজার থেকেও চিংড়ি পোনা চলে যাচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন স্থানের ঘেরগুলোতে। এদিকে, সড়ক পথে পুলিশ প্রশাসন চেকপোস্ট বসিয়ে মাদকসহ অস্ত্রের চালান আটকের ঘটনা ঘটলেও চিংড়ি পোনা আটকের কোন নজির নেই। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করেই ঘের ব্যবসায়ীরা চিংড়ি পোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত।

উল্ল্যেখ, ২০১৭ সালে ২৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের একটি টিম সীতাকু- উপজেলাধীন বড় দারোগারহাট এলাকায় কয়েকটিন বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এর পর আর কোন অভিযানের নজির নেই। জেলা প্রশাসনের ঢিলেমির কারনে চিংড়ী পোনা পাচার আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। খুলনাগামী একটি বাস থেকে ওই সময় ৩ লাখ চিংড়ি পোনা জব্ধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সন্দ্বীপ চ্যানেলের কুমিরা ঘাটে এসব পোনা অবমুক্ত করা হয়। মৎস্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এসব পোনার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা হলেও ভবিষ্যত মূল্য প্রায় কোটি টাকা।

সীতাকুন্ড উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে সর্বশেষ যে অভিযানটিন পরিচালিত হয়েছে সেটি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে। বড় দারোগারহাট এলাকায় গাড়ীতে তল্লাশি অভিযানে চেকপোস্ট বসায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে সহকারি কমিশনার (ভূমি)সহ প্রশাসনের লোকজন। এ সময় খুলনাগামী একটি বাসে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় বাসে লাগেজ ভ্যানে ১৬টি ড্রামে ৩ লাখ চিংড়ি পোনা জব্ধ করা হয়।

খুলনাগামী ‘মিম জাল পরিবহণ’র খুলনা-ব-১১-০১০৫ নং গাড়ির দুই চালক ও দুই সহকারিকে জরিমানা করা হয়। প্রত্যেককে নগদ ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম রেজা ও সীতাকুন্ডের সহকারি কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল শনিবার বিকেলে এ অভিযান পরিচালনা করেন। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উপজেলার কুমিরা ঘাটে ভ্রাম্যমান আদালত এসব চিংড়ি পোনা অবমুক্ত করে। মৎস্যসম্পদ বিনষ্ট হওয়া বন্ধে ও সামুদ্রিক চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কুমিরা ঘাটে এসব পোনা দীর্ঘ প্রায় একঘন্টা সময়ের মধ্যে অবমুক্ত করা হয়।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন