২৮ অক্টোবর ২০২৫

চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার-অপারেশন বন্ধের ঘোষণায় ক্যাব’র উদ্বেগ

ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় দুই নারী চিকিৎসককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে চিকিৎসকদের সব ধরনের প্রাইভেট চেম্বার-অপারেশন বন্ধ রাখায় ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সাধারণ রোগীদের জিম্মি করে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

ক্যাব নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, দুইজন চিকিৎসককে গ্রেফতারের কারণে অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এ ধরনের অমানবিক ও অন্যায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। চিকিৎসক হোক আর যা-ই হোক সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইনিভাবে মোকাবেলা করা উচিত। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে হীন ষডযন্ত্রে ধর্মঘটের ডাক দেয়া জনগণের চিকিৎসা সেবার মতো মৌলিক অধিকার খর্ব করার সামিল। যা জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করার হীন প্রয়াস শুধু মাত্র নিন্দনীয় নয়, এটা চরম বর্বরতার সামিল এবং আদিমযুগে ‘জোর যার মল্লুক তার’ সে স্লোগানে প্রত্যাবর্তনের আহবান। এটা অনেকটা লাশের রাজনীতির মতো।

নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে লাখ লাখ রোগীকে জিম্মি করে এ ধরনের অনৈতিক, অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অমানবিক কর্মকাণ্ড পরিহার করে সকল চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার-অপারেশন বন্ধ রাখার ঘোষণা বাতিল করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আদতালতের কাছে প্রতিকার চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে অবৈধ ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি করেন।

ক্যাব নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে অবিলম্বে সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে প্রাইভেট চেম্বার-অপারেশন ও সকল চিকিৎসা বন্ধের ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করে রোগীদেরকে জিম্মি করে এ ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি পরিহার করার আহবান জানান।

গুটি কয়েক অসাধু লোকের কারণে প্রাইভেট চেম্বার-অপারেশন ও সকল চিকিৎসকের একযোগে অঘোষিত ধর্মঘট চিকিৎসকদের মহান পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং চিকিৎসকরা আইনে উর্ধ্বে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে মত প্রকাশ করে এ ধরনের আত্মঘাতি কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহবান জানান।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, চিকিৎসা পেশা একটি মহান সেবাধর্মী পেশা হলেও বর্তমানে সনদবিহীন, ভুঁয়া, অসাধু চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকদের কারনে এ মহান পেশাকে কাজে লাগিয়ে দিনে দিনে কোটিপতি হবার বাসনায় লিপ্ত। সেকারণে রোগীর সেবা, মানবতার সেবার চেয়ে অর্থই তাদের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও সুযোগ সুবিধা থাকলেও রোগীরা সেখানে নূন্যতম চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। রোগীদেরকে বেসরকারী ক্লিনিক ও চেম্বারে যেতে পারমর্শ প্রদান করা হয়। আর যে কোন মানুষ রোগাক্রান্ত হলেই রোগী হলেই আগে পরামর্শ দেয়া হয় প্যাথলজিকাল টেস্ট ও অপারেশন। কারণ এতে চিকিৎকদের লাভ বেশি। যার কারণে প্যাথলজিকাল ল্যাবগুলি ব্যাঙের ছাতার মতো শহর, গ্রাম সর্বত্র ছাড়িয়ে পড়েছে। আর ক্লিনিকগুলি নামমাত্র সেবা দিয়ে গলা কাটা বিল আদায় করছে। বিএমএসহ সরকার ও বিরোধী দলের সমর্থিত চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠনগুলির দৌরাত্ম্য, একচেটিয়ে প্রভাবের কারণে এখানে রোগীদের মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কোন প্রকার নজরদারি করার সাহস পর্যন্ত নেই। ফলে মানুষ অসহায় হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে চিকিৎসার জন্য ভিড় জমায়।

নেতৃবৃন্দ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেক্টরে এ ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বেসরকারি ক্লিনিক, প্যাথলজিকাল ল্যাবসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সকল প্রতিষ্ঠানে কঠোর নজরদারির দাবি জানান। স্বাস্থ্য সেক্টরে কমিশন প্রথা, উপহার প্রথা বাতিলসহ ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় কঠোর আইনি প্রতিকার এবং সিবিএ সংগঠনের মতো বিএমএর অযাচিত হস্তক্ষেপ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেন তারা হলেন— ক্যাব কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।

আরও পড়ুন