তারেক মাহমুদ »
সেই পুরোনো চেহারায় ফিরতে শুরু করেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। জীবিকার তাগিদে পুরোদমে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে নগরবাসী। ফুটপাত থেকে অলিগলি ও কাঁচাবাজার সর্বস্তরেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত দেখা গেছে। এতে ব্যাপকভাবে বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি। করোনার প্রাদুর্ভাবে নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। নিত্যপণ্য ও কাঁচাবাজারগুলোতে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল দেখা গেছে। কোথাও সামাজিক দূরত্ব ও সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের আলামত দেখা যায়নি। গণপরিবহন চালু হওয়ায় বাস, টেম্পোতে গাদাগাদি করে মানুষকে চড়তে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে ৬৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আরও ২০৮ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের ১৪২ জন ও উপজেলা পর্যায়ে ৬৩ জন রয়েছেন। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১৯১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ৭৬ জন। সুস্থ হয়েছেন অন্তত ২২৭ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমুখী। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি করায় শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত সাধারণ ছুটি কার্যকর না হওয়া, পর্যায়ক্রমে ছুটির শর্ত শিথিল করা, ঈদ উপলক্ষে শপিং মল, বিপণিবিতান খুলে দেয়া, সাধারণ ছুটি পালনে সরকারি সংস্থাগুলোর নমনীয়তার কারণেই এখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। সাধারণ ছুটি তুলে দেয়ার পর করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে কী না এর ফলাফল পাওয়া যাবে আরও ১৪ থেকে ২১ দিন পর।
করোনা সংক্রমণের উদ্বেগজনক পরিস্থিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মানুষের অসচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হলে জনস্বার্থে সরকার আবারও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনা প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়, যা গত ৩০ মে শেষ হয়। ৩১ মে সরকারি ও বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়েছে। গতকাল থেকে চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী গণপরিবহনও চালু হয়েছে। যদিও এর আগে সাধারণ ছুটির মধ্যেই গত ২৬ এপ্রিল পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়। এর দুই সপ্তাহ পর থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে থাকে, যা এখনও বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রথমদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে করোনা সংক্রমণ বেশি ছিল। পরবর্তীতে তা সারাদেশে ছড়িয়েছে। প্রথমদিকে ওই তিন জেলাকে ‘লকডাউন’ (অবরুদ্ধ) করা হলে করোনার প্রায় ৮০ শতাংশ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যেত। সরকারি প্রশাসন লকডাউন ঘোষণা না করে বার বার সাধারণ ছুটি বাড়িয়েছে। তাছাড়া ওই সময় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার কম ছিল।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব বাংলাধারাকে বলেন, অনেকের এখন উপসর্গও দেখা যাচ্ছে না। অর্থাৎ অনেকের শরীরে করোনাভাইরাস রয়েছে, কিন্তু তাঁরা জানেন না। কেউ জানেন না। এটিই সবচেয়ে ভয়ের বিষয়। কারণ, আপনার পাশ দিয়ে সুস্থ মানুষ হিসেবে যিনি হাঁটছেন, যার সাথে আড্ডা দিচ্ছেন; তিনিও এই ভাইরাসের নীরব বাহক হতে পারেন। তাই নিজেদের অজান্তেই এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে। এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে ঘরে থাকার বিকল্প নেই। অর্থাৎ ঘরে থাকলেই আপনি নিরাপদ। আর ঘর থেকে বের হলেই সংক্রমণের ঝুঁকিতে। আমরা বারবার এ বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষকেই দেখা যাচ্ছে, তাঁরা কোন কিছুই মানছেন না। বিশেষ করে তরুণ ও মধ্য বয়সীরা ঘরে থাকছেন না। অকারণে বাইরে ঘুরছেন। তাই এই বয়সীদের করোনা সংক্রমণের হার বেশি। ঘরে না থাকলে এ ভাইরাসের সংক্রমণ আরো ভয়াবহ হতে পারে বলেও সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই চিকিৎসক।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বাংলাধারাকে বলেন, মানুষ অপ্রয়োজনে বাইরে বেশি ঘুরা-ফেরা করছেন। ঘরে থাকার জন্য আমরা বারবার অনুরোধ করছি। কিন্তু অনেকেই কথা শুনছেন না। অকারণে বাইরে বের হচ্ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। আর বাইরে বের হলেই করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি। তাই সচেতন না হলে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা আরও বাড়বে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













