৪ নভেম্বর ২০২৫

ছাত্রলীগের একাংশের অবরোধে চবিতে শাটল ও শিক্ষকবাস চলাচল বন্ধ

চবি প্রতিনিধি »

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গতকাল মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন ও শিক্ষকবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সকালে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের পদত্যাগ চেয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগের একাংশ (বিজয় গ্রুপ)।

জানা যায়, গতকাল রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের গাড়িগুলোর চাকার বাতাস ছেড়ে দেওয়া হয় এবং কিছু গাড়ির স্টার্টিং সংযোগে সুপারগ্লু লাগানো হয়। ফলে কোনো শিক্ষক বাস ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যায়নি শহরগামী কোনো শিক্ষক বাস। পাশাপাশি বটতলী স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের হোস পাইপ কেটে দেওয়া হয় এবং সহকারী লোকো মাস্টার অপহরণ করা হয়। যার কারণে কোনো শাটল ট্রেনও বিশ্ববিদ্যালয় রুটে চলাচল করেনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর প্রধান অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ উন নবী এবং ষোলশহর স্টেশন মাস্টার তন্ময় চৌধুরী।

শনিবার (৩১ আগস্ট) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসে সিএফসি এবং বিজয় নামে পরিচিত এ দুই গ্রুপ। সংঘর্ষের খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বেশ কিছুক্ষণ দু’গ্রুপ ধাওয়া-পাল্টা ও ইট-পাটকেল ছুড়াছুড়ি করে। এতে অন্তত পাঁচ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১০-১১ শিক্ষাবর্ষের মো. ইলিয়াছ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ওবায়দুর রহমান লিমন, লোক প্রশাসন বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নিলয় হাসান, পরিসংখ্যান বিভাগের ১০-১১ বিভাগের মাহফুজুর রহমান, ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রিয়াম রায় প্রান্ত।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার আগে সোহরাওয়ার্দী হলে সিএফসি কর্মীদের কিছু রুম দখলে নেয় বিজয় গ্রুপের কর্মীরা। এ সময় সিএফসি কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হল থেকে বিতাড়িত হয়। শনিবার রাতে সিএফসি গ্রুপের কর্মীরা তাদের রুম ফের দখলে নিলে দুই গ্রুপে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিজয় গ্রুপকে সোহওয়ার্দী হল থেকে বিতাড়িত করে আলাওল হলের দিকে সিএফসি গ্রুপ ধাওয়া দেয়। এ সময় সিএফসি গ্রুপ আলাওলের সামনে অবস্থান নিলে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে বিজয় গ্রুপের নেতা ও সাবেক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক এইচ. এম তারেকুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের নির্দেশে এই অতর্কিত হামলা চালানো হয়। তাকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চেয়েছি। কিন্তু সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে রাজনীতি করার মন মানসিকতা তার নেই। তার মতো একজন অছাত্রের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতি কখনো সফল হবে না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি এবং দ্রুত তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিজয় গ্রুপের নেতা ইলিয়াস হিযবুত তাহেরীর সঙ্গে যুক্ত এবং কিছু দিন আগে শাটল ট্রেনে পোস্টার লাগানোর কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় অস্ত্র ঠেকিয়ে নেতাকর্মীদের হুমকি ধমকি দিতেন। রাতে হলে ছাত্রলীগ কর্মীদের অস্ত্র ঠেকালে তাকে প্রতিহত করেন। কমিটির শুরু থেকে তিনি ঝামেলা করে আসছেন। ইলিয়াস ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তাকে আমরা দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে, শিক্ষকবাস বন্ধ এবং শাটলট্রেন বন্ধ থাকায় অনেক বিভাগেই বন্ধ রয়েছে ক্লাস পরীক্ষা। থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী দৈনিক অধিকারকে বলেন, বাস এবং ট্রেন বন্ধ থাকায় ক্লাসই-পরীক্ষায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। আমরা কথা বলেছি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে। দ্রুত সবকিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ