মিরসরাই প্রতিনিধি »
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের উপকূলীয় জনপদ মায়ানী ইউনিয়নে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ ও অপকর্মের শিরোমনি ওমর ফারুক। দীর্ঘ ৬ বছর স্থানীয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি থাকার সুবাদে তার হাতে গড়ে ওঠে একটি কিশোর গ্যাং। যার মাধ্যমে মায়ানী ইউনিয়ন ও তার আশপাশের এলাকাকে অপরাধের স্বর্গরাজ্য বানায় ফারুক।
জানা গেছে, স্থানীয় মধ্যম মায়ানী গ্রামের ব্যবসায়ী ফজলুল করিমের কাছে চাঁদা দাবি করে ফারুক। এরপর তিনি বাদি হয়ে ফারুকের বিরুদ্ধে মিরসরাই থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গত মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) রাতে স্থানীয় বড়তাকিয়া বাজার এলাকা থেকে ফারুককে গ্রেপ্তার করে গতকাল বুধবার (২৪ মার্চ) সকালে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
মিরসরাই থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, বুধবার ফারুককে একটি চাঁদাবাজি মামলা ও একটি মারামারি মামলায় আদালতে হাজির করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে যা এখনো তদন্ত চলছে।
এদিকে ফারুকের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও নানা অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠা মিরসরাইয়ের মায়ানী ইউনিয়ন এলাকার মানুষ তার গ্রেপ্তারের খবরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী।
স্থানীয় মায়ানী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নূরের ছাপা বলেন, ‘ফারুক সভাপতি থাকাকালীন ৬ বছরে সংগঠনের ইমেইজ ক্ষুন্ন করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।’
ফারুকের যত অপকর্ম:
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফারুক গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে অভিযোগ দিতে থানায় ভিড় করছে ভুক্তভোগী লোকজন। স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছেও নিজেদের অভিযোগ জানাতে ছুটে আসছেন তারা।
মায়ানী ইউনিয়নের মনু ভূঁইয়া বাড়ির আজমল খান শুলন নামে এক সৌদি-আরব প্রবাসি জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে তার পরিবার ফারুকের সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে নির্যাতিত হয়ে আসছে। কয়েক বছর আগে তাদের ১ একর ২০ শতক মরিমাণ একটি জমি দখল করে ফারুক সেখানে ইট-শুড়কির ব্যবসা শুরু করে। যা এখনো দখল করে রেখেছে।
মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কজন সদস্য ফারুকের সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। বুধবার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শামছুদৌহা, মাহফুজ মিয়া মনা ও নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা সকলেই ফারুক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে অসহায়। কিছু বললেই মারধর করতো। এলাকার কোন উন্নয়ন কাজ করতে হলে তাকে চাঁদা দিতে হতো। চাঁদা না দেওয়ায় এ তিনজন ইউপি সদস্যকে একাধিকবার লাঞ্ছিত হতে হয়।
মায়ানী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘ফারুক করেনি এমন কোন অপরাধ নেই। আমার ৬ লক্ষ টাকা সে আত্মসাত করে পরে টাকা চাইতে গেলে বেশ কয়েকবার আমাকে খুন করার চেষ্টা করে।’
এদিকে চাঁদাবাজিতে সিদ্ধহস্ত ফারুকের হাত থেকে রেহাই পাইনি মায়ানী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুলের মাঠে মাটি ভরাট কাজে চাঁদা দাবি করে ফারুক। চাঁদা না দেয়ায় তার হাতে লাঞ্ছিত হতে হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের।
এবিষয়ে নিজের নাম ও পদবী প্রকাশ না করা শর্তে স্কুল পরিচালনা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুলের মাঠে মাটি ভরাট কাজে সে চাঁদা দাবি করে পরে চাঁদা না দেয়ায় তার হাতে আমাদের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা লাঞ্ছিত হয়।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













