৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ছুটির সঙ্গে ঘরে থাকাও নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয় »

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে কয়েক দফায় আগামী ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি চলমান। এই ছুটির মূল উদ্দেশ্যই ছিল, মানুষকে নিজ নিজ ঘরে রেখে করোনাভাইরাসের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। এরই মধ্যে করোনার প্রদুর্ভাব সারাদেশে দ্রুত বাড়তে থাকায় আরেক দফায় সাধারণ ছুটি বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন নিশ্চিত করেছেন, এই দফায় আগামী ১৬ মে পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়ছে।

অপর দিকে দেখুন, দেশের ব্যবসায়ী মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ তাদের ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছেন। দাবি জানাতে শুরু করেছে, করোনার এই সঙ্কটের মধ্যেও সীমিত আকারে ব্যবসা ও যাতায়াত সুবিধা চালু করতে দেবার জন্য। সীমিত আকারে গার্মেন্টসও খুলেছে কিছু এলাকায়। পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে, সামনে ঈদুল ফিতর। সাধারণ জীবন যাপনের পাশাপাশি উৎসবের কারণে দেশের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। করোনার কারণে তা ব্যাহত হয়েছে। জরুরি সহায়তা হিসেবে খাদ্যের বাইরেও বাসস্থান ভাড়া, পানি-গ্যাস-বিদ্যুত বিল, শিক্ষা খরচ ও চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থের প্রয়োজন জনসাধারণের, যা কোনোভাবেই অনেকে সংগ্রহ করতে পারছে না। এই বিষয়টি সামনের দিনগুলিতে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে।

শুধু তাই নয়, এ জন্য সব ধরনের অফিস-আদালত-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে উপাসনালয়, গণপরিবহনসহ বলতে গেলে সব কিছুই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

যে দাবিই উঠুক আর যে পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন, সবার আগে মাথায় রাখতে হবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। যে করোনার কারণে জরুরি ছুটি বা লকডাউন, তা পুরোপুরি না নিয়ন্ত্রণে আসলে পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ হতে পারে।

কিন্তু সরকারের সেই উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়নি। কেননা অনেকক্ষেত্রেই মানুষকে ঘরে রাখা যায়নি কিংবা মানুষ ঘরে থাকেনি। এমন কি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নামিয়েও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। শুধু কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকানসহ জরুরিসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখার কথা থাকলেও মানুষ নানান অজুহাতে ঘর থেকে বের হয়েছে এবং হচ্ছে।

আর এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত ২৬ এপ্রিল থেকে আবার ‘সীমিত পরিসরে’ আর ‘স্থানীয় শ্রমিক নিয়ে’ তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে অন্য চিত্র। মালিকরা কথিত সীমিত পরিসর বা স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে নয়, পুরো মাত্রায় কারখানার কার্যক্রম শুরু করেছে, ঠিক আগের মতো করেই। যদিও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বিবেচনা করে এভাবে কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, এতে ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে। তাদের সেই শঙ্কা এরই মধ্যে কিছুটা সত্যি হতে শুরু করেছে।

ঢাকা-সাভার-গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রামেও যে হবেনা এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। এই অবস্থায় শুধু ছুটি বাড়িয়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কতটা সাফল্য আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

এটা ঠিক, মানুষকে ঘরে থাকতে বললেই তাকে ঘরে রাখা যায় না। সে জন্য কিছু দায়ও থাকে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য অন্তত প্রতিদিনের খাবার নিশ্চিত করা। সরকার কিছুটা চেষ্টাও করেছে। কিন্তু বহু মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছেনি। দীর্ঘদিন আয় না থাকায় বহু মানুষকে ঘর থেকে বের হতে হয়েছে খাদ্যের সন্ধানে।

এমন বাস্তবতায় আমরা মনে করি, শুধু ছুটি বাড়িয়েই কারোনাভাইরাস ঠেকানো সম্ভব না। এ জন্য মানুষকে অবশ্যই ঘরে রাখতে হবে। এটাই এখন একমাত্র উপায়।

পর্যায়ক্রমে কীভাবে কোন বিষয়ে শিথিল হতে হবে, তা নিয়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত জরুরি। তাহলেই জনগণের জীবনের পাশাপাশি ধীরে ধীরে দেশের অর্থনীতি কিছুটা প্রাণ ফিরে পাবে বলে আমাদের আশাবাদ।

আরও পড়ুন