বাংলাধারা প্রতিবেদক»
ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ, তাই তাকে ‘শাসন’ করতে বেদমভাবে মারধর করেন মা। মারধরের একপর্যায়ে ছেলেকে ধাক্কা দিলে সে ছিটকে পড়ে খাটের লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে মাথার পেছনে গুরুতর আঘাত পায়। এরপর রক্তক্ষরণ হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আর এই খুনকে ধামাচাপা দিতে ছেলের বাসার চালের লোহার রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে সাজান আত্মহত্যার ‘নাটক’। আর এই কাজে সহযোগীতা করেন ওই ছেলের মামা। গ্রেফতারের পর জবানবন্দীতে ছেলে হত্যার ঘটনার এমনই চালঞ্চল্যকর তথ্য দেয় মা।
সোমবার (৮ আগস্ট) রাতে নগরের আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ওই কিশোরের নাম মো. হাছান (১৪)। সে মাগুরা জেলার বেলাল হোসেনের (৪২) ছেলে। বর্তমানে পরিবারসহ তারা নগরের পাহাড়তলী থানার ওয়ার্লেস কলোনি এলাকায় থাকতেন। তার মায়ের নাম কুলসুম বেগম (৩৮) ও মামার নাম ফারুক ইসলাম (২৪)।
এর আগে গত রবিবার স্থানীয় এক দোকানে তার মামা নুরনবী ইসলাম সোহেলের মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে শহরে মায়ের বাসায় চলে আসে হাছান। সোহেল বিষয়টি তার মা কুলসুমকে জানানোর পর তিনি ক্ষুব্ধ হন। সোমবার রাত ১১টার দিকে ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে বেদমভাবে মারধর করেন।
জানা যায়, হাছানের বাবা বেলালের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী কুলসুম বেগম নগরের আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনি আল হেরা মসজিদ গলিতে আলাদা বাসায় বসবাস করেন। ভাই ফারুকও পাশাপাশি আরেক বাসায় থাকেন।
পুলিশ জানায়, শাসন করতে গিয়ে মারধরের একপর্যায়ে ছেলেকে ধাক্কা দেন। এতে হাছান ছিটকে পড়ে খাটের লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে লেগে মাথার পেছনে গুরুতর আঘাত পায়। এতে রক্তক্ষরণ হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে হাছান। ছেলের সাড়াশব্দ না পেয়ে কুলসুম ভয় পেয়ে যান।
ভয় পেয়ে কুলসুম তার ভাই ফারুককে ডেকে আনেন। তখন দু’জনে খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আত্মহত্যা হিসেবে সেটাকে প্রচারের পরিকল্পনা করেন। দু’জন মিলে হাছানের মৃতদেহ বাসার ভেন্টিলেটরের লোহার রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। রাত পৌনে ২টার দিকে হঠাৎ তারা বাসার বাইরে এসে চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। প্রতিবেশি আসমা আক্তার এলে তাকে বাসার বাইরে রেখে দরজার ফাঁক দিয়ে ওড়না কেটে লাশ নিচে নামায়। একজন চিকিৎসককেও ডেকে আনা হয়। তিনি এসে হাছানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় বেলাল হোসেন বাদী হয়ে কুলসুম ও ফারুককে আসামি করে আকবর শাহ থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ কুলসুম ও ফারুককে তাদের বাসা থেকে গ্রেফতার করে।
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা তথ্য পাই, হাছান বাসার চালের ভেন্টিলেটরে লোহার রডের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আলামত দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তখন আমরা কুলসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কুলসুম হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।’
হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ওই মা মঙ্গলবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘মঙ্গলবার কুলসুম ও ফারুককে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। কুলসুম হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত দু’জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
বাংলাধারা/আরএইচআর













