১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

জনকন্ঠ সম্পাদকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা; তদন্তে পিবিআই

বিশেষ প্রতিবেদক»

গ্লোব-জনকন্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান ও দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক শামীমা আতিকউল্লাহ খানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়ের হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের ৬ষ্ঠ আদালতে এ মামলা দায়ের করেছেন গ্লোব-জনকন্ঠ শিল্প পরিবারের সাবেক নির্বাহী পরিচালক তোফায়েল আহমদ।

চট্টগ্রাম আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামীদের ৬ জনের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তোলা হয়েছে। সি.আর মামলা নং-১৪০/২১ এ ফৌজদারী দন্ডবিধির ৫০০/৫০১/৫০২/৩৪ ধারার বিধান মতে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি আনায়ন করেছেন বাদী পক্ষের ও চট্টগ্রাম আদালতের এডভোকেট ইকবাল হোসেন মাহবুব।

বিজ্ঞ আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেষ্টিগেশন(পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো’কে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মানহানি এ মামলায় আসামী করা হয়েছে গ্লোব-জনকন্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান ও দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক শামীমা আতিকউল্লাহ খান, পরিচালক মিশাল আতিকউল্লাহ খান ও জিশাল আতিকউল্লাহ খান, নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, হিসাব বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মজিবুর রহমান, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোস্তাক আহমেদ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গ্লোব-জনকন্ঠ শিল্প পরিবারের সাবেক নির্বাহী পরিচালক তোফায়েল আহমদ ১৯৮৯ সালের ২০ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০মে পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩২ বছর চাকুরী করেছেন। কিন্তু অনিবার্য কারন দেখিয়ে গত ৩০মে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বাদীকে। পরদিন ৩১মে বাদীর ছবিসহ বিজ্ঞাপন আকারে ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করা হয়েছে। গ্লোব খামার প্রকল্পের বিও একাউন্টে এক কোটি টাকা গ্লোব সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছেন বাদী। কোম্পানীর ক্ষতির সম্ভাবনার অভিযোগ তুলে ১০ জুন ঢাকার হাতিরঝিল থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বাদীর বিরুদ্ধে। মূলতঃ গ্লোব খামার প্রকল্পের নামে গ্লোব সিকিউরিটিজে শেয়ার ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে ২০১৯ সাল থেকেই কোটি কোটি টাকার শেয়ার ব্যবসা চালিয়ে আসছে গ্লোব-জনকন্ঠ শিল্প পরিবার।

মিথ্যা অভিযোগের তদন্ত এবং তদন্ত কর্মকতার্র অভিযোগ পত্র দাখিলের  আগেই গত ১৪ জুন দৈনিক জনকন্ঠ ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় বাদীর ছবিসহ ‘সন্ধান দিন’ এমন বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। হুবুহু একই বিজ্ঞাপন গত ১৫ জুন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশ করে এক কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়েছে। অথচ মামলার এজাহারে বাদী নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন গ্লোব-জনকন্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান শামীমা আতিকউল্লাহ খানের লিখিত অনুমতি না নিয়ে নির্বাহী পরিচালক তোফায়েল আহমদ গত  ৫মে ও  ৯মে সাউথইষ্ট ব্যাংকের মোট ২০টি চেকে এক কোটি টাকা তাদেরই গ্লোব খামার প্রকল্পের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের কথা উল্ল্যেখ করেছেন। এরপর বাদীর বিরুদ্ধে ২১ জুন দৈনিক জনকন্ঠে ‘সন্ধান দিলে পুরস্কার’ এবং ২৫ জুন দৈনিক জনকন্ঠে আবারো ‘সন্ধান দিলে পুরস্কার’ এমন বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে বাদী তোফায়েল আহমদ এর মানহানি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে গ্লোব -জনকন্ঠ শিল্প পরিবার লিঃ এর একাউন্টে প্রতিমাসে ৫০ লাখ টাকা থেকে ৮০/৯০ লাখ টাকা আয়ের উৎসের হিসাব ভিন্ন ভিন্ন হিসাবে আপডেট করার বিষয়ে  প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও সম্পাদক শামীমা আতিকউল্লাহ খানসহ পরিচালনা পর্ষদকে অবহিত করেছিলেন বাদী। তবে গ্লোব-জনকন্ঠ শিল্প পরিবার লিঃ এর চেয়ারম্যান তাঁর উৎস বিহীন আয় এক্সিম ব্যাংক লিঃ নিউ ইস্কাটন শাখার  জনকন্ঠ লিঃ (চলতি হিসাব নং- ০১৪১১১০০০০০২০৬), প্রাইম ব্যাংক লিঃ নিউ ইস্কাটন শাখার জনকন্ঠ লিঃ (হিসাব নং- ২১২৮৩১২০০৮২৮৮) এবং জনতা ব্যাংক লিঃ দিলকুশা কর্পোরেট শাখার গেøাব-জনকন্ঠ শিল্প পরিবার লিঃ হিসাবে প্রতিমাসে বিপুল টাকা জমার তথ্য  রয়েছে যা হিসাব রেজিষ্ট্রারে উল্ল্যেখ করা হয় নাই এমন বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে যান। গ্লোব -জনকন্ঠ শিল্প পরিবার লিঃ বা চেয়ারম্যানের সব হিসাবের আয়ের উৎস জানার প্রয়োজন নেই বলে বাদীকে ধমকে দেন। পরে বিকেলে মামলায় অভিযুক্তরা বেআইনীভাবে বাদীকে চাকুরীচ্যুত করার নীল নকশা তৈরী করেন।

গত ৩০ মে বাদীকে ‘অনিবার্য কারনবশত’ সাসপেন্ড করা হয়। বিকেল ৩টায় সাসপেন্ড করে মাত্র ৫ ঘন্টার মধ্যে গ্লোব জনকন্ঠ শিল্প পরিবার লিঃ সকল প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় নথীপত্র হিসাব নিকাশসহ গাড়ী ও ড্রাইভারকেও বুঝিয়ে দিতে বাধ্য করেন মামলার আসামীরা।

বাদী কর্তৃক গ্লোব জনকন্ঠ শিল্প পরিবার লিঃ এর পক্ষে গ্লোব সিকিউরিটিজের শেয়ার বাজারে সাউথইস্ট ব্যাংকের ২০টি চেকের বিনিয়োগকৃত এক কোটি টাকা থেকে আসামীরা গত ২জুন ৭২ লাখ টাকা এবং ৯জুন ১০ লাখ টাকাসহ মোট ৮২ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে গ্লোব সিকিউরিটিজের লেজার স্টেটমেন্টে।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী ও গ্লোব-জনকন্ঠ শিল্প পরিবারের সাবেক নির্বাহী পরিচালক তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘আমি ৩২ বছর গ্লোব-জনকন্ঠ শিল্প পরিবারে চাকুরী করেছি। অথচ বর্তমান চেয়ারম্যান ও অন্যান্য আসামীদের নীল নকশায় আমাকে অনিবার্য কারন দেখিয়ে সাসপেন্ড করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানির চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি মিথ্যা মামলার মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে যা সংবাদপত্র ও প্রকাশনার বিধি বর্হিভূত। ফলে মানহানির মামলা করেছি।‘

এ ব্যাপারে মামলার বাদী পক্ষের এডভোকেট ইকবাল হোসেন মাহবুব বলেন, ‘কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমান না হওয়া  ও তদন্তকারী কর্মকর্তার অভিযোগপত্র আদালতে জমা না হওয়ার আগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ মানহানিকর।‘

বাদীর অভিযোগ গ্রহনযোগ্য হওয়ায় মামলা তদন্তের জন্য পিবিআই’কে দেয়া হয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ