সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
মিয়ানমার সরকারের নিপীড়নের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দিতে গিয়ে এখন অস্বস্তি নেমে এসেছে কক্সবাজারের স্থানীয়দের জনজীবনে। তাদের নিত্য অপরাধ, মাদক কারবারসহ নানা কারণে বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। জনজীবনে অস্বস্তির পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে আদালতে মামলা জটের কারণও হয়ে উঠছে তারা। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জেলা বিচারিক প্রশাসন। এটি প্রশমনে জেলা আইনজীবী সমিতি ও আইনজীবীদের সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।
সূত্রমতে, রোহিঙ্গাদের কারণে পুরো কক্সবাজার জেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নানান অপরাধে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে জেলাবাসী। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে জেলাবাসী আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
তথ্যমতে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মাদক ও অস্ত্রের ঝন-ঝনানি এখন নিত্যনৈমিত্যিক ব্যাপার। প্রতিদিন কোন না কোন ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। ক্যাম্পগুলোতে সশস্ত্র তৎপরতা, মানবপাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। কারণে-অকারণেই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছে।ক্যাম্পে বসেই ইয়াবার ব্যবহার বাড়াচ্ছে তারা। ওদের কারণে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে।
এসব বিষয় নিয়ে জেলা বিচারিক প্রশাসন অবজারভেশন দিয়ে বলেছে। সেই অবজারভেশনে, সিনিয়র জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা মাদক ব্যবসা, হত্যা, গুম, ধর্ষণ, মানবপাচার, ডাকাতি, অপহরণসহ নানাবিধ জঘন্যতম অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এতে উক্ত এলাকার পাশে পাশে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতিসহ জনজীবনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইন-শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইন-শৃংখলা রক্ষায় ও অপরাধ দমনে হিমশিম খাচ্ছেন। দিন দিন তাদের অপরাধ কর্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তৎপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে মাদক, হত্যা, গুম, ডাকাতি, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত মামলা হচ্ছে।
এতো আরও জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের নামীয় হত্যা, অপহরণ, মাদক, ডাকাতি মামলাসহ অন্যান্য মামলায় তদন্তের নির্ধারিত সময়ের পূর্বে জামিনের বিষয়ে তদবীর না করে তদন্ত কার্যে সহযোগিতা করা সংশ্লিষ্ট সকলের নৈতিক দায়িত্ব। উল্লেখিত মামলা সমূহের আসামীর পক্ষে ফৌজদারী মিস মামলা মূলে জামিন বিষয়ে কোন আদেশ প্রচারিত হলে তৎপরবর্তীতে একই আসামীর জামিনের জন্য ৪ মাসের মধ্যে ভিন্ন কোন ফৌজদারী মিস দরখাস্ত দাখিল করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। যদি করা হয় তাতে বিচারক শুনানি কাজে ওভারলোডেড হয়ে স্বাভাবিক মামলা নিস্পত্তিতে বিঘ্ন হচ্ছে।
এবিষয়ে সকলের জ্ঞাতার্থে ও কার্যার্থে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, ১ম ও ২য় আদালত, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অনুলিপি দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও জেলা বারের নোটিশ বোর্ডের টানানো হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী বাপ্পী শর্মা বলেন, বিচারিক প্রশাসনের নোটিশের আগেই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত ছিলো। লোভের কারণে রোহিঙ্গাদের জামিনে আমরা প্রতিযোগিতামূলক ভাবে দৌঁড়ায়। এ অবজারভেশন সেটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে। এখন হলেও আমাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া বাঞ্ছনীয়।













