৫ নভেম্বর ২০২৫

জনবল সংকটে ধুঁকছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল

হাসান সৈকত »

চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি’তে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল। ১১০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে ৪টি সাধারণ কেবিন ও ২টি ভিআইপি কেবিন রয়েছে। তবে হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাক্তার ও নার্স। হাসপাতালের জন্য ২২জন ডাক্তার বরাদ্দ থাকলেও প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ও বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা মিলিয়ে আছেন মাত্র ৪জন। তার মধ্যে একজন ডেন্টাল সার্জন। যার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রেলওয়ে কর্মচারি ও তাদের স্বজনদের।

এছাড়া হাসপাতালে ৬জন সিনিয়র নার্স থাকার কথা থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাত্র ৮জন জুনিয়র নার্স নিয়েই চলছে কার্যক্রম। হাসপাতালে ফার্মাসিস্টের প্রয়োজন ১৮জন। তবে ১৮ জনের মধ্যে কর্মরত আছে মাত্র ২জন, বাকি ১৬ জনের উপস্থিতি নেই।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের আনাগোনা থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিভাগ সম্পূর্ণ ফাঁকা পড়ে আছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শিবু নাথ বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় সকলেই রেলওয়ের কর্মচারি অথবা রেলওয়ে পরিবারের সদস্য। তাদের সকলের চিকিৎসা ও ওষুধ-পত্র আমরা ফ্রি-তেই দিয়ে থাকি। তবে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হওয়া যেসব কর্মচারির বেসিক বেতন ১৫ হাজার ৭৩০ টাকার নিচে, তাদের জন্য ফ্রি ডায়েটের ব্যাবস্থা রয়েছে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি বেতনের কর্মচারিদের ডায়েটের জন্যে নিজের পকেট থেকে অতিরিক্ত ফি পরিশোধ করতে হয়। আর এই কারণে অনেক রোগী রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা না নিয়ে অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়, কারণ সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়েটের জন্য কোনো প্রকার অতিরিক্ত ফি দিতে হয় না।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বেশির ভাগ রোগী চিকিৎসা নিতে এসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খোঁজেন। তবে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। কিন্তু চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে রোগীদের সুবিধার্থে বিশেষভাবে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন। ২৪ ঘণ্টা হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স। তবে ৩ শিফটে ভাগাভাগি করে দায়িত্ব পালনের মতো জনবল আমাদের নেই, এতে আমাদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।’

হাসপাতালের প্রধান সহকারী জিয়া বলেন, ‘হাসপাতালে সঠিকভাবে পানির সাপ্লাই হয় না। যেটুকু আসে তাও আবার আয়রন মিশ্রিত। এই পানি ব্যাবহার করলে রোগীদের চুলকানিসহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।’

শুধু চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল নয়, ঠিক একই চেহারা ফুটে ওঠে নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে হাসপাতালেরও। এই হাসপাতালে নেই বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা। তবে অতিরিক্ত পদে কর্মরত ডা. আনোয়ার হোসেন পালন করছেন বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তার দায়িত্ব। এছাড়া পাহাড়তলী রেলওয়ে হাসপাতালের জন্য ৩জন ডাক্তার বরাদ্দ থাকলেও সে জায়গায় কর্তব্যরত আছেন চিন্ময় বিশ্বাস নামের একজন সহকারী চিকিৎসক। পাহাড়তলী রেলওয়ে হাসপাতালের সরাসরি কোনো আভ্যন্তরীণ বিভাগ নেই। শুধুমাত্র বহির্বিভাগে চলে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম।

হাসপাতালের জন্য ফর্মাসিস্টের প্রয়োজন ৬জন। কিন্তু এখানে নিয়জিত আছেন মাত্র ২জন, বাকি ৪টি পদ পড়ে আছে শূন্য অবস্থায়। এছাড়াও হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ আছে একটি অ্যাম্বুলেন্স। তবে অ্যাম্বুলেন্সের নেই কোনো ড্রাইভার, গাড়ির স্টিয়ারিং এখন সহকারীর হাতে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলাধারাকে বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে যে ডাক্তারের সংকট রয়েছে তা আমরা লক্ষ্য করেছি। বর্তমানে রেলওয়েতে ডাক্তার নিয়োগ বন্ধ আছে। তবে ডাক্তার ছাড়া তো হাসপাতাল পরিচালনা করা সম্ভব নয়। রেলওয়েতে ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে, আর সে ব্যাপারে আমাদের কার্যক্রম চলছে।’

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ