৯ নভেম্বর ২০২৫

জব্দ করা গরু ছিনিয়ে নিতে চোরাকারবারিদের হামলা, আত্মরক্ষায় বিজিবির গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

কক্সবাজারের রামুতে ‌‘জব্দ করা গরু ছিনিয়ে নিতে’ বিজিবির ওপর হামলা চালিয়েছে চোরাকারবারিরা। তাদের নিক্ষেপ করা ইট-পাটকেল থেকে আত্মরক্ষায় ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বিজিবি। সেই গুলিতে মারা গেছেন বিজিবি-চোরাকারবারির ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করা রড-সিমেন্টের দোকানের শ্রমিক আব্দুর জব্বার।

শনিবার (৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান শামশুল আলম।

নিহত আব্দুর জব্বার (৪০) রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ এলাকার মৃত জাকের আহমদের ছেলে। তিনি বাজারের রড-সিমেন্টের দোকানে মালামাল উঠানামার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তৎক্ষনাৎ আহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামশুল আলম বলেন, আমি অসুস্থ, তাই বাসা থেকে বের হয়নি। তবে, স্থানীয়দের বরাতে জেনেছি, শনিবার রাতে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ এলাকায় মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ৫-৬ টি গরু জব্দ করে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। জব্দ গরুগুলো হাঁটিয়ে নিয়ে যাবার সময় পাচারের সাথে জড়িত লোকজন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়।

এক পর্যায়ে পাচারকারিরা বিজিবির সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও ঢিল ছুঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়। কৌতুহল বশত তা দেখছিল স্থানীয়রা। এ সময় নির্মাণ সামগ্রী বিক্রয়কারি এক দোকানে মালামাল উঠানামা করা শ্রমিক জব্বারও গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত হন আরও একাধিক জন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে চেয়ারম্যান আরো বলেন, ঘটনার পরপরই বিজিবির সদস্যরা নিহতের মরদেহ নাইক্যংছড়ি ব্যাটালিয়নে নিয়ে গেছে। পরে খবর পেয়ে রামু থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হোসাইনের নেতৃত্ব একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন। সেখান হতে তারা বিজিবি ব্যাটালিয়নে যান।

এদিকে, গুলি লাগার ঘটনাস্থলে রক্তের দাগ মুছে ফেলতে ঘটনাস্থলে বালি চাপা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রামু থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হোসাইনের সরকারি নম্বরে একাধিক বার কল করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। গুলিতে শ্রমিক নিহত ও ঘটনার বিষয়টি উল্লেখ করে হোয়াইটঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও উত্তর পাঠাননি তিনি।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নাইক্যংছড়ি ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক মো. রেজাউল করিম কোনো ধরনের সাড়া না দেয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে, গভীররাতে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি তাদের নিয়ন্ত্রিত একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিষয়ে ‘টহল দলের ওপর চোরাকারবারীদের আক্রমণে চার বিজিবি সদস্য আহত’ শিরোনামে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছাড়ে।

তাতে উল্লেখ আছে, দেশীয় প্রাণীজ সম্পদ শিল্প রক্ষার্থে মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু চোরাচালানের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন (১১ বিজিবি) কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ইতিমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন (১১ বিজিবি) এই অভিযানে প্রায় এক হাজার ৩০০ গরু বা ১৩ কোটি টাকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ এপ্রিল রাতে সীমান্তের চোরাই গরু জব্দ করে টহল দল পায়ে হেঁটে ক্যাম্পে ফেরার সময় ওঁৎপেতে থাকা সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী, দুষ্কৃতিকারী ও স্থানীয় সহযোগী প্রায় ২০০ হতে ৩০০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিশোঠা ও ইটপাটকেলসহ অতর্কিত হামলা করে। টহলদলের সবাই কমবেশী আহত এবং তিনজন সদস্য গুরুতর আহত হয়। এ সময় টহল দল সরকারি জানমাল রক্ষা এবং নিজেদের আত্মরক্ষার্থে গুলি করতে বাধ্য হয়। এতে এক চোরাকারবারি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় একনলা বন্দুক, একটি ক্রীচ ও একটি দা উদ্ধার করা হয়। আহত বিজিবি সদস্যদের চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও গুরুতর আহত তিনজন বিজিবি সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা দায়েরসহ অন্যান্য আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আরও পড়ুন