৫ নভেম্বর ২০২৫

জলজট-যানজটে বিপর্যস্ত নগরজীবন

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

বর্ষার অঝোর ধারায় বিপর্যস্ত নগরজীবন। রাস্তা খোঁড়াখুড়ি, জলজট আর যানজটে নাকাল নগরবাসী। গত কয়েকদিন যাবৎ ভারী বৃষ্টির কারণে এখনো নগরীর অলিগলিসহ কিছু কিছু সড়কে পানি জমে থাকায় এবং খানাখন্দের কারণে কর্মদিবসে যানজটের দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরবাসী। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য সেবা সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন।

বৃষ্টি নগরবাসীর বিলাসী মনকে এখন আর আবেগতাড়িত করে না। লাখো মানুষের এই নগরীতে বৃষ্টি যেন এখন এক আতঙ্কের নাম। হোক সেটা অল্প সময়ের ভারী বর্ষণ বা দিনভর কখনো গুড়ি গুড়ি বা মুসলধারের বৃষ্টি।

টানা তিনদিনের ভারি বর্ষণে নগরীর অলি-গলি তো বটেই ডুবে যায় প্রধান প্রধান সড়কগুলো। সেই সঙ্গে উন্নয়নের নামে এলোমেলো রাস্তা খোড়াঁখুড়ির কারণে সৃষ্ট জলজটের দুর্ভোগ কাটেনি। রাস্তার কাদা, গর্ত, আর যানজটের চরম ভোগান্তি যে কবে শেষ হবে কারো জানা নেই।

ঘর থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যারা বের হয়েছেন, মাঝ রাস্তায় তাদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, এই ক‘দিনের টানা বৃষ্টিতে যেভাবে পুরো চট্টগ্রাম ডুবে গেছে, তাতে এ শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তীব্র যানজটের কারণে ১ ঘণ্টা দূরত্বের রাস্তা পার হতে সময় লেগেছে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টারও বেশি। সকালে অফিসের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়ে দুপুরের আগে অধিকাংশ মানুষ অফিসে পৌঁছতে পারেননি। আবার ঘরে ফেরার পথেও পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। প্রবল বর্ষণের কারণে মঙ্গলবার সকালে স্কুলগামী শিক্ষার্থী আর অফিসগামীদের পড়তে হয় মারাত্মক বিড়ম্বনায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তাদের যানবাহন ধরতে হয়েছে। দুপুরে স্কুল ছুটির পর নগরীর স্কুলগুলোর আশপাশে দেখা গেছে হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

দীর্ঘসময় যানবাহন না পেয়ে ভারি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাধ্য হয়ে ওই সব শিশুদের দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিতে হয়েছে। নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে কোমরপানিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বাস-মিনিবাস বন্ধ হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। এতে রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পুরো শহর স্থবির হয়ে পড়ে। যানবাহনের চাকা স্থির হয়ে যায়। এ সুযোগে রিকশা ও সিএনজি চালকরা ভাড়াও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন।

ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় গতকাল মঙ্গলবারও নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকায় ছিল হাঁটু থেকে কোমর পানি। আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বাদুরতলা, প্রবর্তক মোড়, দুই নম্বর গেইট, অলঙ্কার, পাহাড়তলী, চকবাজার, মেহেদিবাগ, অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বাকলিয়া, হালিশহরসহ নগরীর বড় অংশজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফ্লাইওভারের উপরেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা ভারি বৃষ্টিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও কয়েকদিন ভারি বর্ষণ হতে পারে।

জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও এই প্রকল্পের কোনো সুফল গত কয়েকদিনে দৃশ্যমান হয়নি। মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নগরীর খালগুলো থেকে মাটি তোলার কাজ শেষ করা যায়নি। দখলদারদের উচ্ছেদ করার কার্যক্রম চলছে। আগামী বছর সুফল পাওয়া যাবে। সিডিএ’র কাজে তেমন কোনো সুফল আসেনি এ পর্যন্ত।

তার উপর বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এবারের বর্ষায় সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা হিসেবে দেখা দিয়েছে খোঁড়া রাস্তা আর গর্তে জমে থাকা পানি। ওয়াসার খোঁড়ে রাখা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় রিকশা-ট্যাক্সি উল্টে অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন যাত্রীরা।

গতকাল সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয় বিমানবন্দর সড়কে। পানিতে ডুবে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বিমানবন্দর অভিমুখী দু’টি সড়ক। একারণে কয়েকজন যাত্রী ফ্লাইটও মিস করেছেন।

এছাড়া পতেঙ্গা থানার সামনে দিয়ে কাটগড় সড়কটিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। সড়কের এক-তৃতীয়াংশ দখলে নিয়েছে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রæপ। ৮/৯ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পানি জমে আছে। এ সড়ক দিয়েও ছোট যানবাহন চলাচল এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়।

উত্তর বিভাগের টিআই (প্রশাসন) মো. মহিউদ্দিন খান জানান, আমাদের টিআই, সার্জেন্টরা যানজট নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। সড়কে পানি উঠায় যান চলাচলের গতি সীমিত ছিল। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। দায়িত্বরতরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন যানজট নিরসনে।

টানা বর্ষণ ও জলজটের কারণে নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরাও আসতে পারছেন না। অর্ধেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। যেগুলো খোলা সেগুলোতেও বিকিকিনি ছিল না।

জানা যায়, ভারী বর্ষণে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। বেশ কিছু দোকান-গুদামে পানি প্রবেশ করে পণ্য নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ বাজার, আমির মার্কেট, আসাদগঞ্জ, শুটকিপট্টি এবং কোরবানিগঞ্জের অনেক দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। ফলে পেঁয়াজ, রসুন, আদা এবং মসলাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য পানিতে ভিজে যায়। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পানিতে এখানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক দোকানে পানিও প্রবেশ করেছে। মালামাল নষ্ট হয়েছে।

এছাড়া নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, হকার্স মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্সসহ শতাধিক মার্কেটে এবং মার্কেটের সামনে পানি উঠায় ব্যবসা-বাণিজ্য এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। দোকান পাটও খুলেনি ব্যবসায়ীরা।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ