৩১ অক্টোবর ২০২৫

জহুর আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলাধারা ডেস্ক »

উপমহাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের পুরোধা, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভার স্বাস্থ্য, শ্রম, সমাজকল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী, চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরীর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

এ উপলক্ষে উপলক্ষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বর্তমান করোনা পরিস্থিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। এছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করবে।

জহুর আহমদ চৌধুরী ১৯১৬ সালে চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম আবদুল আজিজ চৌধুরী ও মাতার নাম জরিনা বেগম। তিনি তিনবার বিয়ে করেন ও বিশ সন্তানের জনক ছিলেন। তার তৃতীয় পত্নী ডা. নুরুন নাহার জহুর একাধারে, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও নারী নেত্রী ছিলেন। তার প্রথম পুত্র সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন এবং তার দ্বিতীয় পুত্র মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ছিলেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিসভায় শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন জহুর আহমদ চৌধুরী। শ্রমমন্ত্রী হিসেবে তিনি জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সম্মেলনে (আই এল ও কনভেনশন) বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে কোতোয়ালী-পাঁচলাইশ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। জহুর আহমদ চৌধুরী আমৃত্যু আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

জহুর আহমদ চৌধুরীর জীবনের সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তর সালের ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণার পর, চট্টগ্রামে জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে পাঠিয়েছিলেন দেশে-বিদেশে প্রচারের জন্য। পরবর্তীকালে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা প্রচার করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে আগরতলায় অবস্থান নিয়ে জহুর আহমদ চৌধুরী মুজিব নগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে গোটা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি আগরতলা গিয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের সংবাদ বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশের পক্ষে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও জহুর আহমেদ চৌধুরী পারিবারিক দুরবস্থার জন্য পড়াশুনা করতে পারেননি। রাজনীতির প্রতি আগ্রহ থেকে তিনি শৈশবকাল থেকেই মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি কলকাতায় গমন করেন ও মওলানা ইসলামবাদীর সান্নিধ্যে আসেন। কংগ্রেসপন্থী হবার কারণে তিনি ইসলামবাদীর সঙ্গে বেশিদিন থাকেননি। কলকাতা অবস্থানকালে তার সঙ্গে ফজলুল কাদের চৌধুরী ও আবুল খায়ের সিদ্দিকীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়।

১৯৩৭ সালে জহুর আহমদ চৌধুরী কলকাতার খিজিরপুরে ডক শ্রমিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রাম ডক শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন। এ বছর সর্বপ্রথম শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং শেরে-এ-বাংলা ও সোহরাওয়ার্দির কাছাকাছি চলে আসেন। ১৯৪৫ সালে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন। ১৯৪৭ সালে সিলেট গণভোটে অংশ নেন। ১৯৪৯ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন ও জয়লাভ করেন।

১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টের হয়ে, শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি এবং হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে, নির্বাচনে দাড়ান এবং মুসলিম লীগের প্রখ্যাত নেতা রফিউদ্দিন সিদ্দিকীকে পরাজিত করেন। জহুর আহমেদ চৌধুরী আমৃত্যু রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

১৯৭৪ সালে ৪ জুন নিও ব্রংকাইটিস রোগে আক্রান্ত হলে জহুর আহমেদ চৌধুরীকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২৮ জুন বঙ্গবন্ধু তাকে দেখতে হাসপাতালে গমন করেন। ৩০ জুন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জহুর আহমেদ চৌধুরীর শেষ দেখা হয়। ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই সকাল ৬-৪৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সেদিন দুপুর ২-৩০ মিনিটে জহুর আহমেদ চৌধুরীর মৃতদেহ বিমানযোগে চট্টগ্রাম আনা হয়। ২ জুলাই সকাল ১০-৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় এবং দুপুর ১২ টায় দামপাড়ায় তার বাসভবন সংলগ্ন পারিপারিক কবরস্থানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ও সামরিক মর্যাদায় তার মরদেহ সমাহিত করা হয়।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন