২৯ অক্টোবর ২০২৫

জাতিসংঘের পরিদর্শকদের পারমাণবিক কেন্দ্রে ‘যেতে দেবে’ রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক »

জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ফোনালাপের পর ক্রেমলিন জাপোরিঝিয়ায় পরিদর্শকদের যেতে দেওয়ার এ ঘোষণা দেয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এমন এক সময়ে এ ঘোষণা এল যখন রাশিয়ার দখলে থাকা ওই কেন্দ্রের কাছে লড়াই চলছে; রাশিয়ার ছোড়া গোলায় নিকটবর্তী এলাকায় ৪ বেসামরিক আহত হয়েছে এমন খবরও মিলেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার ইউক্রেইনকে যুদ্ধে সহায়তা দিতে আরও অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।

ফ্রান্স ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ফোনালাপের পর ক্রেমলিন জানায়, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের পরিদর্শনে ‘প্রয়োজনীয় সহযোগিতা’ দিতে পুতিন রাজি হয়েছেন।

রাশিয়া ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে কথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর পর মার্চের প্রথমদিকেই জাপোরিঝিয়া কেন্দ্রের দখল নিয়ে নেয়।

কেন্দ্রটি এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে, তাদের নির্দেশনা অনুযায়ীই ইউক্রেইনের প্রযুক্তিকর্মীরা সেটি চালাচ্ছেন।

‘সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) বিশেষজ্ঞদের কেন্দ্রটিতে পাঠানোর গুরুত্বের বিষয়টি উভয় নেতাই আমলে নিয়েছেন’, বলেছে ক্রেমলিন।

বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর ওপর নজর রাখা জাতিসংঘের সংস্থা আইএইএ-র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, তিনি নিজেই জাপোরিঝিয়া কেন্দ্র পরিদর্শক দলের নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী।

‘অত্যন্ত অস্থির ও ভঙ্গুর এই পরিস্থিতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- নতুন কোনো পদক্ষেপ যেন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে বিপন্ন না করে’, বলছেন গ্রসি।

জাপোরিঝিয়া কেন্দ্রে পরিদর্শক যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার শুক্রবার রাতের ভাষণে বলেছেন, এ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি নিয়ে এখনও কাজ চলছে।

‌‘যদি তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে রাশিয়ার ব্ল্যাকমেইল চলতেই থাকে, তাহলে ইউরোপের অনেক দেশের ইতিহাসে এই গ্রীষ্ম সর্বকালের অন্যতম বিয়োগান্তক বলে বিবেচিত হতে পারে’, বলেছেন তিনি।

কিইভ বলছে, রাশিয়া ওই জাপোরিঝিয়া কমপ্লেক্সকে একটি সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। সেখানে সামরিক সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র ও প্রায় পাঁচশর মতো সেনা মোতায়েন করেছে এবং এই পারমাণবিক কেন্দ্রকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তারা নিপার নদীর অন্যপাশের বিভিন্ন শহরে হামলা চালাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে জাপোরিঝিয়া কেন্দ্রের আশপাশে ব্যাপক গোলা পড়ছে; কিইভ এবং মস্কো দুই পক্ষই কেন্দ্রটিতে হামলার জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে।

জাপোরিঝিয়া কেন্দ্রের আশপাশে রুশ সেনাদের গোলাবর্ষণ শুক্রবারও অব্যাহত ছিল বলে দাবি ইউক্রেইনের কর্মকর্তাদের ।

তারা জানায়, মস্কোর হামলায় নিপার নদীর অপর পাশের মারহানেতস শহরে ৪ বেসামরিক আহত হয়েছে।

রাশিয়ার হামলায় ওই এলাকার ৫টি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, টেলিগ্রামে এমনটাই দাবি করেছেন আঞ্চলিক গভর্নর ভ্যালেন্তিন রেজনিশেঙ্কো।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের যেতে দেওয়ার আগ্রহ দেখালেও ওই কেন্দ্র এবং তার আশপাশকে ‘অসামরিক এলাকায়’ পরিণত করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন রাশিয়ার কর্মকর্তারা।

এ ধরনের পদক্ষেপ ‘কেন্দ্রটির ঝুঁকি আরও বাড়াবে’ বলে শুক্রবার বলেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও গণমাধ্যম বিভাগের উপপরিচালক ইভান নেশায়েভ।

এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া এক চিঠিতে ইউক্রেইনের ‘নানান উসকানির’ বিবরণ দিয়ে রাশিয়া অভিযোগ করেছে, কিইভ ওই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরে ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে।

ইউক্রেইন একটি ছোটখাট দুর্ঘটনার মাধ্যমে তেজস্ক্রিয়তা লিক করতে এবং এর মাধ্যমে রাশিয়াকে ‘পারমাণবিক সন্ত্রাসবাদে’ অভিযুক্ত করতে চাইছে বলে ভাষ্য জাতিসংঘে দায়িত্বপালনরত রাশিয়া মিশনের।

ওই চিঠিতে জাপোরিঝিয়া কেন্দ্রে সেনা বা অস্ত্র রাখার কথা অস্বীকার করা হয়েছে; ইউক্রেইনীয়রাই কেন্দ্রটিতে গোলা ছুড়ছে বলে অভিযোগও পুনর্ব্যক্ত করেছে তারা।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইনকে আরও ৭৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এসব সরঞ্জামের মধ্যে আছে হিমারস দূরপাল্লার রকেট লঞ্চার, কামানের গোলা, নজরদারি ড্রোন ও ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।

এই প্যাকেজের মধ্যে প্রথমবার মাইনপ্রতিরোধী যানও যুক্ত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যুদ্ধের ময়দানে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা প্রতিহতে ইউক্রেইন তার পশ্চিমা মিত্রদের পাঠানো অস্ত্রশস্ত্রের ওপর অনেকখানি নির্ভর করে আসছে।

আরও পড়ুন