২৩ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমাবেশে

জামায়াত-শিবিরপন্থী সংঘবদ্ধ হামলা, ৩ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

চট্টগ্রামে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে সাড়ে ৪টায় নগরের লাভলেইন এলাকায় মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন তাঁরা।

তাঁদের দাবি গুলো হলো চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলাকারী ছাত্র শিবিরের ক্যাডারদের অবিলম্বে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। নারী কর্মীদের ওপর লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এবং এটিএম আজহারুল ইসলামের দায়মুক্তির রায় পুনর্বার বিবেচনা জন্য সর্বোচ্চ আইনি ও নৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা ও জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের রায় পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী।

লিখিত বক্তব্যে এ্যানি চৌধুরী বলেন, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারকে ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মিছিলে গত ২৭ মে ছাত্র শিবির দফায় দফায় হামলা চালায়। এতে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতেই জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায়। নারী কর্মীদের শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করে।

হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, হামলাকারীরা হলেন- আবরার হোসাইন রিয়াদ, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক, ইসলামী ছাত্র শিবির, আকাশ চৌধুরী, জামাত নেতা, তৌকির, আসফারসহ প্রমুখ। গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রশিবির ন্যাক্কারজনক হামলার মাধ্যমে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিস্যাৎ করেছে।

এটিএম আজহারের রায় প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, এটিএম আজহারের বিচার প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। এর মাধ্যমে আদালতের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিচার ব্যবস্থা যে আওয়ামী আমলের মতো এখনো পুরোমাত্রায় রাজনৈতিক প্রভাবাধীন তাই প্রমাণিত হলো। আওয়ামী লীগ আমলে ঘোষিত আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকলে নতুন করে শুনানি শুরু করা যেত। অথচ তা না করে রিভিউ শুনানির রায়ে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হলো।

গতকাল বুধবার গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলায় অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এতে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। নগরের জামালখানের চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্র জোটের ব্যানার কেড়ে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। শাহবাগবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে এই হামলা চালানো হয়। এতে ছাত্রশিবিরের কর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতা–কর্মীদের দেখা গেছে।

তবে ঘটনাস্থলে শিবিরের কেউ ছিলেন না বলে বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখার শিবিরের সভাপতি মো. তানজীর হোসেন ও সেক্রেটারি মুমিনুল হক। শিবিরের নেতা–কর্মীরা জানিয়েছেন, আকাশ চৌধুরী বর্তমানে শিবিরের দায়িত্বশীল কোনো পদে নেই। শিবিরের কোনো কর্মী এ ধরনের কাজে জড়িত নন।

হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁদের মুক্তির দাবিতে এদিন এশার নামাজের পর কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নেতা–কর্মীরা। তবে ব্যানারে তাঁদের নাম ইংরেজিতে ‘অ্যান্টি-শাহবাগ মুভমেন্ট’ লেখা ছিল। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি রিপা মজুমদার, বিপ্লবী ছাত্র যুবা আন্দোলন নগর কমিটির সহসভাপতি ঈশা দে, ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি তৌকির আহমেদ, বৃহত্তর চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম নগরের সাধারণ সম্পাদক অংহ্লাসিং মারমা,গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সহসভাপতি পুষ্পিতা নাথ।

আরও পড়ুন