২৩ অক্টোবর ২০২৫

জাল চিঠিতে বসুন্ধরা মাল্টি স্টিলের ৫০ কোটি টাকার ভাড়া ফাঁকির চেষ্টা!

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যের স্টোর রেন্ট (ভাড়া) মওকুফের নামে ৫০ কোটি টাকা ফাঁকি দিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জাল চিঠি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ-এর বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তাকে চট্টগ্রাম থেকে আটক করেছে পুলিশ। একইসাথে বন্দরের পক্ষ থেকে জালিয়াতির মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুকের নামে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছরের ১২ মে বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নজরুল ইসলামের স্বাক্ষরযুক্ত একটি চিঠি জমা দেয়, যেখানে স্টোর রেন্ট মওকুফের অনুরোধ জানানো হয়।

চিঠিতে উল্লেখ ছিল—বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০২২ অনুযায়ী, এক মাসের মধ্যে ৬০ শতাংশ মাল খালাসের শর্তে মওকুফ প্রযোজ্য হবে। তবে চিঠিটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ হলে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানায়।

১৪ মে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, তারা এমন কোনো চিঠি ইস্যু করেনি এবং এটি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ১২ জুন থেকে ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারির মধ্যে বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল চারটি জাহাজ ও কন্টেইনারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করলেও সময়মতো খালাস না করায় জমেছে বিপুল পরিমাণ স্টোর রেন্ট ও ডেমারেজ।

বেজা (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ)-এর একটি সুপারিশে তারা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে মওকুফের আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৯ জানুয়ারিতে এক চিঠিতে জানায়—বসুন্ধরা মাল্টি স্টিলের কাছে বকেয়া ভাড়া ৭২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫০ কোটির বেশি পরিমাণ টাকা মওকুফের উদ্দেশ্যেই জালিয়াতির চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ সুলতান আহসান উদ্দীন জানান, “বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলায় মোহাম্মদ ফয়েজ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”

এ বিষয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কো-অর্ডিনেটর অ্যান্ড মিডিয়া অ্যাডভাইজার লুৎফর রহমান হিমেল বলেন, “আমি মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। দুঃখিত, আগে দায়িত্বটা ভালোভাবে বুঝে নিই, ভবিষ্যতে আপনাদের সহযোগিতা করব ইনশাল্লাহ।”
প্রসঙ্গত, হিমেল বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সাবেক সম্পাদক ছিলেন।

অন্যদিকে, বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে—
গত বছরের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন, ডলার সংকট, ব্যাংকিং তারল্য ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল সময়মতো যন্ত্রপাতি খালাস করতে পারেনি। এতে বিপুল ডেমারেজ জমে।

তারা আরও দাবি করেছে, “দেশীয় ও বৈদেশিক উদ্যোক্তা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রক্ষা করতে যথাযথ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে কথিত জালিয়াতির ঘটনায় বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল কোনোভাবেই জড়িত নয়।”

তবে সত্যতা যাচাই ও তদন্তের আগে বিষয়টি নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বন্দরের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে এখন আইনি প্রক্রিয়া এগোচ্ছে।

এএস/বাংলাধারা

আরও পড়ুন