মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»
নিখোঁজ, হারানো, হত্যার হুমকি থেকে শুরু করে কিছু পরোক্ষ ঘটনার মামলা হয়না। ওসি আর থানার ডিউটি অফিসারদের পরামর্শেই থানায় জিডি হয়। জিডির তদন্ত সরাসরি হয়না বলেই থানা পুলিশেরও কিছু করার থাকে না। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই প্রক্রিয়া চলমান হলেও এর পরিবর্তন হচ্ছে না ডিজিটাল যুগে এসেও। প্রসিকিউশন মামলা করে আদালত পর্যন্ত দৌড়াতে হয় জিডির অনুমতির জন্য।
নন জিআর মামলা আদালতের অনুমতি নেয়ার পরই জিডি’র তদন্ত শুরু হয়। থানায় জিডি নিয়ে পুলিশ নিজেদের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারণ অধর্তব্য অপরাধ পুলিশ কখনই খতিয়ে দেখে না মামলা ছাড়া। নিজেদের দায়িত্বকে এড়িয়ে যেতেই এজাহারের পরিবর্তে জিডি নিতে সক্রিয় থাকে থানা পুলিশ। এমন অভিযোগ অনেক ভুক্তভোগীর।
আরো অভিযোগ রয়েছে, কোন ঘটনা ডাকাতি বলে ভুক্তভোগী দাবী করলেও সংখ্যাভেদে ও বিশ্লেষণে চুরির মামলায় ফেলে দিতে পারলে পুলিশ হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। কারণ তখন তদন্তে ঢিলেমী দেয়ার পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতদের হাজত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসারও একটা সুযোগ করে দেয় পুলিশ। সিএমপির এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জিডি আর এজাহারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন।
পুলিশের সিটিজেন চার্টার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, থানায় কোন ভুক্তভোগী এলেই তাকে প্রাধান্য দেবে কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার। ক্ষতিগ্রস্থের কথা শুনে সে অনুযায়ী জিডি কিংবা মামলা রুজুর পরামর্শও কর্তব্যরত পুলিশের কাছ থেকে পাবে ক্ষতিগ্রস্থ। পুলিশের সিটিজেন চার্টার সিএমপির ১৬টি থানায় ঝুলানো থাকলেও এর এক ভাগও কার্যকর হয় না ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষে। এমন অভিযোগ, নগরীর আলকরণ এলাকার সাইফুদ্দিন আখন্দ নামে এক প্রবাসীর। পুলিশের কর্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে অর্থাৎ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ থানা কোতোয়ালী। কিন্তু এ থানায় চলছে সবচেয়ে বড় অপরাধ কার্যক্রম। অপরাধীদের চেয়েও বড় অপরাধ পুলিশের। কিন্তু এসব কর্মকর্তার বিচার হয় না। ফলে অপরাধও বন্ধ হয় না।
অভিযোগ রয়েছে, মোটর সাইকেল চুরি হলে পুলিশ ক্ষতিগ্রস্থের পক্ষ থেকে হারানোর জিডি গ্রহণ করে। পুলিশের দায়িত্ব খুঁজে বের করা। কিন্তু সে দায়িত্ব এড়াতেই হারানো জিডি গ্রহণ করা হয়। বস্তুত ক্ষুদ্র আয়তনের জিনিসই মানুষের কাছ থেকে হারাতে পারে। তাই বলে, গাড়ি চুরি হলে হারানো জিডি গ্রহণ করা বা পরামর্শ দেয়া। এটি ক্ষতিগ্রস্থের কাছে পুলিশের বড় অপরাধ। ক্ষতিগ্রস্থরা মনে করে জিডি গ্রহণ করে পুলিশ অপরাধীদের আষ্কারা দিচ্ছে। এদিকে, ডাকাতির মামলা হতে হলে পুলিশের হিসেব অনুযায়ী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মালামাল লুটে নিতে হবে।
কিন্তু কারও অজান্তে বা ঘুমন্ত অবস্থায় গ্রিল কেটেও যদি দূর্বৃত্তরা বা সন্ত্রাসীরা ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে যায় পুলিশ এটিকে চুরি হিসেবেই দেখায় রেজিষ্ট্রারে। এক্ষেত্রে ডাকাতির মামলায় কমপক্ষে ৫ জন সদস্যকে দেখাতে হবে। অভিযোগকারী তার বর্ণনায় চারজনকে গৃহে প্রবেশের কথা বললেও ঘরের বাইরে থাকা অন্য সদস্যদের বিষয়ে না বললে সেক্ষেত্রে চুরি হিসেবে এজাহার অন্তর্ভুক্তি হয়। এক্ষেত্রেও পুলিশ অপরাধীদের বাঁচাতে সন্ত্রাসীদের নাম না জানলে ক্ষতিগ্রস্থকে জিডি করার পরামর্শ দেন এমনকি এ জিডির প্রেক্ষিতে বা সন্দেহজনকভাবে এলাকার কাউকে চিহ্নিত করতে পারলে তখন মামলা নেবেন বলে জানান পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা। পুলিশের এ ধরনের কর্মকান্ড মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। আতঙ্কগ্রস্থ করে তুলছে ক্ষতিগ্রস্থদের।
সিএমপির এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জিডি হচ্ছে অধর্তব্য অপরাধ। জিডিকে পুলিশ গুরুত্ব দেয় না। কোন অপরাধীর বিরুদ্ধে শত জিডি হলেও লাভ নেই। জিডির মাধ্যমে অপরাধীকে উল্টো ছাড় দেয়া হয়। সিএমপির ১৬টি থানার হিসেবে অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ৫০টি জিডি হলে মাসে জিডির পরিমান দাড়াবে প্রায় দেড় হাজার । তবে প্রতিদিন গড়ে ১টি মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনা থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা বা পুলিশ কর্মকর্তা।
জিডির কপি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অভিযোগকারীর সামনেই তদন্ত কারার নির্দেশ প্রতিনিয়ত দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দুয়েকদিন পরে এগুলো ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে তদন্তকারী কর্মকর্তার টেবিলের ডেক্সে। ধর্তব্য অপরাধ হলে নিয়মিত মামলা করতে হয়। তবে মামলার হিসেব নিকেশ উর্ধতনকে বুঝিয়ে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা পর্যায়ে তদন্তের নিয়ম থাকলেও মামলা অনুযায়ী উভয় পক্ষকে নোটিশ করার মাধ্যমে সমাধা করার চেষ্টা চালায়।
নগরীর ১৬টি থানায় প্রতিমাসেই ভুক্তভোগীরা মামলা দায়ের করছেন। মাস শেষে উর্ধতন কর্মকর্তারা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে মামলার রিপোর্ট জানতে চাইলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই কর্মকর্তারা ধর্তব্য অপরাধের হিসেব বুঝিয়ে দিতে হয়। এক্ষেত্রে এড়িয়ে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে দীর্ঘদিন তদন্তবিহীন অবস্থায় মামলা পড়ে থাকলে সেক্ষেত্রেও অপরাধীরা পুনরায় ক্ষতিগ্রস্থদের উপর হামলা চালানোর আশঙ্কা থাকে। দুয়েকবার তদন্ত হলেই অপরাধীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয় বলে সিএমপির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিএমপি’র এক তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই পুলিশের কিছু আইন আগের মতোই রয়ে গেছে। অপরাধী ও অপরাধের কৌশল পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই কিন্তু আইনের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। জিডি আমলে নিতে হলে প্রসিকিউশন মামলা করতে হয় আদালতে। আদালত অনুমতি দিলেই জিডির তদন্ত শুরু হয়।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













