ফেরদৌস শিপন »
করোনাভাইরাসের প্রভাবে জনজীবন থমকে আছে বিশ্বব্যাপী। এর মধ্যেই আমাদের সামনে হাজির হয়েছে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান পবিত্রতম মাস মাহে রমজান। প্রতি বছর এ মাসকে সামনে রেখে নানা ধরনের আয়োজন থাকলেও এবার করোনাক্রান্তিতে ভিন্ন চিত্র।
করোনাভাইরাস শনাক্তের শুরুর দিকেও কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়েছেন। এমন দৃশ্যও আমরা দেখেছি। এরপর থেকে করোনাকালেও কেউ কেউ সেই ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করেছেন। এখনও অনেক জায়গায় করোনার দোহাই দিয়ে অনেকেই কারসাজি করছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজানে পণ্যের দাম কম থাকলেও এখানকার অতিলোভী ব্যবসায়ীরা কথিত সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা করেন। এসময় সরকারও এসব অপকর্ম বন্ধের চেষ্টায় সোচ্চার থাকেন। কখনও তারা সফল হন, আবার অনেকাংশেই সফল হন না। এটা আসলে তাদের একার পক্ষে সম্ভবও না। এজন্য আমাদের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে নীতি-নৈতিকতার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।

এদিকে, করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে আবারও লকডাউন ভেঙে রাস্তায় নামতে বাধ্য করা হলো গার্মেন্টস শ্রমিকদের। অথচ এই প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ১ মাসেরও বেশি সময় বলতে গেলে দেশের প্রায় সবকিছুই বন্ধ রয়েছে। এতে খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে সব পেশার মানুষই নানান সংকটে পড়েছেন। যার যার অবস্থান থেকে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করছেন। তাতে শুধু পোশাক কারখানার মালিকরাই নন, বেশিরভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠানই ক্ষতির সম্মুখীন।
সর্বশেষ ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার বলেছে, কঠোরভাবে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে কিছু কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু করা যেতে পারে। এর পরপরই কারখানা মালিকরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যেভাবে শ্রমিকদের আনতে শুরু করলেন, তাতে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি না কমে আরও বেড়ে গেছে। এমনিতেই নানা কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন পোশাক শ্রমিকরা। এ জন্যই কি তাদের জীবনের কোনো দাম নেই? কেন তাদেরকে চাকরিচ্যুতির হুমকি দিয়ে, সরকারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কারাখানা চালু রাখতে হবে? দেশ-জাতি-পৃথিবীর এই দুর্যোগেও কি মালিকরা শুধু নিজেদের মুনাফাই দেখবেন? ব্যবসা তো সারা বছরই করেন তারা, এই সময়টায় একটু মানবিক হওয়া যায় না?

আমরা মনে করি, এখন মুনাফা অর্জনের সময় নয়, দেশ ও জাতিকে বাঁচানোর সময়। যেভাবে সারাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে শতভাগ নিরাপত্তা না দিয়ে পোশাক কারাখানা খোলা উচিৎ হবে না বলে আমরা মনে করি। আর বলতে গেলে যারা কোনো কিছুই মানেন না, তারা যে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করবেন- সেই নিশ্চয়তা দেবে কে?
মানুষের বিপদে তো মানুষকেই এগিয়ে আসারা কথা। কিন্তু সমাজ আর সময় পাল্টেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একদল মানুষ নিজেদের ‘আখের’ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তারপরও আমরা মনে করি, এমন সব উদ্যোগ অন্যদেরকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে উৎসাহ দেয়। কেননা সব কিছুর পরেও মানুষ মানুষের জন্য।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাধারা













