বাংলাদেশের জলসীমায় জ্বালানিবাহী জাহাজে একেরপর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে কুতুবদিয়ায় এলপিজিবাহী জাহাজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সর্বশেষ ঘটনা ঘটলো। তার আগে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের জলসীমায় জ্বালানিবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের তৃতীয় ঘটনা এটি।
জানা গেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন ‘বাংলার জ্যোতি’ নামের একটি অয়েল ট্যাংকারে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। ওই ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়। মৃতরা হলেন, বাংলার জ্যোতির ডেক ক্যাডেট সৌরভ কুমার সাহা, চার্জম্যান নুরুল ইসলাম ও বিএসসি মেরিন ওয়ার্কশপের কর্মচারী মো. হারুণ।
এরপর পাঁচ দিনের ব্যবধানে ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ‘বাংলার সৌরভ’ নামের আরেকটি তেলবাহী জাহাজে আগুন লাগে। ওই জাহাজটিও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন। সেদিন ওই জাহাজে ৫০ ক্রু ছিলো। সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
শুক্রবার গভীর রাত পৌনে একটার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরের চার্লি অ্যাংকরেজের কাছে নোঙ্গর করা রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী জাহাজ এমটি বাংলার সৌরভে আগুন লাগে বলে কোস্টগার্ড জানিয়েছিলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএসসির মালিকানাধীন সচল সাতটি জাহাজের মধ্যে বাংলার সৌরভ ও বাংলার জ্যোতি বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে তেল লাইটারের কাজ করত। অপর পাঁচটি জাহাজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত আছে।
১৯৮৭ সালে নির্মিত জাহাজ দুটি ডেনমার্ক থেকে কেনার পর বিএসসির বহরে যুক্ত হয়।
জাহাজ নির্মাণের সাথে যুক্তরা জানান, এ ধরণের জাহাজের লাইফটাইম ২০ থেকে ২৫ বছর হলেও ৩৬ বছরের বেশি সময় ধরে জাহাজ দুটি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন দুটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের পর এবার কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসবাহী (এলজিপি) একটি জাহাজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে শনিবার রাত পৌনে ১টার দিকে। কুতুবদিয়ার উপকূলের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বহির্নোঙ্গরে ‘সুফিয়া’ নামের ওই লাইটারেজ জাহাজে আগুন লাগে বলে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের জনসংযোগ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি জানিয়েছেন।
খবর পেয়ে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। একটি মেটাল শার্ক এবং চারটি অগ্নিনির্বাপনী ও উদ্ধারকারী দল এ কাজে অংশ নেয়।রোববার (১৩ অক্টোবর) ভোর পর্যন্ত ওই জাহাজে থাকা ৩১ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল। কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট শাকিব মেহবুব অগ্নিকাণ্ডের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে যাচ্ছিল বলে তথ্য দিলেও জাহাজটি কোন দেশ থেকে এসেছিল এবং কী পরিমান এলপিজি তাতে ছিল, কতজন ক্রু ওই জাহাজে ছিলেন, সেসব তথ্য জানা যায়নি।
পরপর তিনটি তেলের জাহাজের আগুনের ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। এগুলো নাশকতা, নাকি দুর্ঘটনা সেটি খতিয়ে দেখা সময়ের দাবী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।













