চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে আসেন মনির (২৬) নামের এক যাত্রী। কাঙ্খিত ট্রেনটির নির্ধারিত সিটের বিপরীতে সবগুলো টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় টিকিট কাউন্টার থেকে হতাশ মুখে ফিরে আসতে দেখা যায় তাকে। পরক্ষণেই স্টেশনে দায়িত্বরত টিকিট চেকারের কাছ যান মনির। স্ট্যাডিং টিকিট কিনতে চাইলে টিসি তার কাছে ১৭০ টাকার টিকিটের মূল্য দাবি করেন ২২০ টাকা। এসময় অতিরিক্ত টাকা দাবি করায় প্রতিবাদ জানালে টিসি কর্তৃক হেনস্থার শিকার হন মনির নামের ঐ যাত্রী।
মনিরের কাছে এগিয়ে গিয়ে ঘটনার বিবরণ জানতে চান এই প্রতিবেদক। মনির বলেন, ১৭০ টাকার টিকিট ২২০ টাকা চাওয়ায় আমি প্রতিবাদ করি। এরপর ওই টিসি আমার কলার ধরে আমায় বের করে দেয়। এ বিষয়ে কথা বাড়ালে তিনি আমাকে মামলা দেওয়ার হুমকিও দেন।
মনিরের অভিযোগের বিষয়ে দায়িত্বরত টিসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা কয়েকজন শেষ মূহুর্তে টিকিট কিনতে আসেন। যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের পরে টিকিট কিনতে এসেছেন সে কারণে তাদের কাছ থেকে জরিমানাসহ টিকিটের দাম ২২০ টাকা চাওয়া হয়েছে। বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ না করে স্রেফ দেরিতে টিকিট কেনার জন্য আপনি জরিমানা করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ওই টিসি।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে এমনই যাত্রী হয়রানির ঘটনা ঘটছে অহরহ। চলছে কালোবাজারে টিকিট বিক্রিও। ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি ঠেকাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা শুরু করেলেও থামেনি টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম। নানাভাবে সক্রিয় এ চক্রটি রেলের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরও ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যাত্রীদের অভিযোগ, অনলাইনে টিকিট শেষ হয়ে গেলেও স্টেশনে গিয়ে বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বাড়িয়ে দিলেই মিলে ট্রেনের টিকিট। টিকিট কালোবাজারির এসব ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে স্টেশনে কর্মরত টিকিট চেকার ও সিপাহীদের বিরুদ্ধে।
ব্ল্যাকে ট্রেনের টিকিট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবির সিপাহি ওয়াহিদুল্লাহর বিরুদ্ধে। অনলাইনে ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে গেলেও নির্দিষ্ট দামের চাইতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বাড়িয়ে দিলেই মিলে ট্রেনের টিকিট। অনেক সময় মানুষের প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে এই টাকার পরিমাণ বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ।
ব্ল্যাকে টিকিট কিনতে আসা এক যাত্রীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অনলাইনে টিকিট পাইনি তাই বাধ্য হয়ে স্টেশনে আসতে হয়েছে। স্টেশনে আসার পর একজন আমাকে ওয়াহিদুল্লাহ নামের একজনের নাম্বার দিয়ে বলে উনার সাথে যোগাযোগ করলে টিকিটের ব্যবস্থা হবে।
তিনি আরও বলেন, ওয়াহিদুল্লাহকে কল দিলে তিনি আমাকে জানান, আমি এখন ডিউটিতে নেই, ডিউটিতে গিয়ে টিকিটের ব্যবস্থা হলে আমি আপনাকে জানাবো।
এ বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে সিপাহি ওয়াহিদুল্লাহর সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হন এই প্রতিবেদক।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জাফর আলম এ বিষয়ে বলেন, আমাদের কাছে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তবে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব।












