২৪ অক্টোবর ২০২৫

ডবলমুরিংয়ে ছিনতাইকারীদের আস্তানায় পুলিশের অভিযান, হামলায় আহত দুই পুলিশ

চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার বারিক বিল্ডিং এলাকায় ছিনতাইকারীদের আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। অভিযানে দুইজনকে আটকসহ লুটকৃত টাকা, ছিনতাই-ডাকাতির সরঞ্জাম ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ওই এলাকায় ছিনতাইকারীদের সক্রিয় থাকার বিষয়টি ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’, যা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জানা ছিল।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বারিকবিল্ডিং মোড়ে ইটের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা একটি খালি জায়গায় একটি টিনশেড ঘরে ছিনতাইকারীদের ধরতে অভিযানে যায় পুলিশ। আর তাদেরকে ছুরিকাঘাত করার পরপরই ঘটনাটি জানাজানি হয়।
আহত দুইজন পুলিশ সদস্য হলেন—ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিল এবং নজরুল। আটক দুই ছিনতাই চক্রের সদস্য হলেন—তারেক এবং জুয়েল।

পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর আসে—বারিকবিল্ডিংয়ে পেশাদার ছিনতাইকারীদের আস্তানা রয়েছে। সেই খবরে ঘটনাস্থলে যান ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক জামিল এবং নজরুল। সেখানে গিয়ে তারা স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সত্যতা পান এবং ছিনতাই চক্রের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারা ওই চক্রের সদস্যদের ধরতে অভিযান চালালেই ওই দুই পুলিশ সদস্যকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। এরপর ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশ গিয়ে দুইজনকে আটক করে এবং আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বারিক বিল্ডিং মোড়ের ঢাকা ট্রাঙ্ক সড়ক লাগোয়া বাউন্ডারি দেওয়াল দেওয়া একটি খালি জায়গা রয়েছে দেশের বৃহৎ শিল্পসংস্থা সিটি গ্রুপের। সেই জায়গার ভেতরেই রয়েছে টিন দিয়ে ঘেরা ছোট একটি ঘর। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল টাকা-পয়সা, ছুরি, চাকুসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র।

এছাড়াও ছিল ছিনতাই-ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম। ওই জায়গা লাগোয়া একটি নির্মাণাধীন ভবনেও ছিনতাইকারীদের আস্তানা রয়েছে—এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি-ছিনতাই করে লুট করা সামগ্রী এবং তাদের ব্যবহৃত সরঞ্জাম তারা সেখানে রাখতো।

ওই জায়গার নিরাপত্তা প্রহরী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ওনারা (ছিনতাই চক্রের সদস্য) ছুরি, কিরিচ, ধামা নিয়ে আমাদের ভয় দেখিয়ে ঢুকে যেতো। বাধা দিলে খুন করার হুমকি দিতো। আমরা থানাকেও জানিয়েছিলাম। কখন থেকে তারা এখানে আছে তা জানি না। আমি কাজ করি মাসখানেক। তাদেরকে আমি সবসময় দেখি। তারা এখানে গাঁজা-মদ খেতো।’

ঘটনাস্থলে গিয়ে নগর পুলিশের পশ্চিম বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভুইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনির, মেহেদী, তারেক, জুয়েল, রাজু, ভান্ডারি এবং রবি এখানে বসে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। যেসব সরঞ্জাম নিয়ে তারা ডাকাতি করে সেগুলো তারা প্রস্তুত করছিল। তারা মূলত ছিনতাই-চুরিই করে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত টাকাগুলো তারা এখানে ভাগ-বাটোয়ারা করছিল। আমাদের ডবলমুরিং থানার টিম এখানে এসে দুইজনকে আটক করে। বাকি অন্যান্যরা আমাদের দুজন পুলিশ সদস্যকে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। তাদেরকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।’

‘আটক তারেক এবং জুয়েলের মধ্যে টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মারামারি হয়েছে। তারা একে অপরকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছ। এর ফলে তারেক মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘টাকা-পয়সা ছাড়াও ছুরি-চাকু এবং ঘর ভাঙার বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে এখান থেকে। এখানে অতীতেও তারা অবস্থান নিয়ে আস্তানা গেড়েছে। এই জায়গা লাগোয়া একটি নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে, সেখানেও তারা আস্তানা গেড়েছে।’

আরও পড়ুন