৮ ডিসেম্বর ২০২৫

ডাব বিক্রেতার বেশে অজ্ঞান পার্টি, আটক ৪

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

নগরীর বাকলিয়া ও কোতোয়ালী থানা যৌথ অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টির চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে মানু্ষের ছিনিয়ে নেওয়া টাকা, ১০০টি ইপিট্রা ক্লোনোজেপাম ট্যাবলেট, ৩২০টি লোনাজেপ ক্লোনোজেপাম ট্যাবলেট ও ১৫টি সিরিঞ্জ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার চারজনের একজন ডাব বিক্রেতা, একজন ক্রেতা ও বাকি দুইজন অজ্ঞান হওয়া ব্যক্তির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এই অপরাধ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি জানান।

গ্রেফতার চারজন হলো- খুলনা জেলার রুপসা থানার বাগমারা এলাকার আবদুল ছমেদ হাওলাদারের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম (৩০), একই এলাকার জয়নাল সর্দারের ছেলে মো. বাবুল (৩৬), ফিরোজপুর জেলার মঠবাড়ি থানার হাসান আলীর ছেলে রতন মিয়া (৮৫) ও বরগুনা জেলার বামনা থানার মধ্য আমতলী এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো. হারুন (৩১)।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান বলেন, গ্রেফতার হওয়া অজ্ঞান পার্টির চার সদস্যের কাছ থেকে মানু্ষের ছিনিয়ে নেওয়া টাকা, ১০০টি ইপিট্রা ক্লোনোজেপাম ট্যাবলেট, ৩২০টি লোনাজেপ ক্লোনোজেপাম ট্যাবলেট ও ১৫টি সিরিঞ্জ উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি জানান, চক্রের বৃদ্ধ সদস্য মানুষের কাছে আকুতি জানান ডাব কিনার জন্য। সাধারণ মানুষ ডাব কিনার সময় চক্রের একজন সদস্য ভালো ডাব ক্রয় করে খেয়ে দেখান, আর সাধারণ ক্রেতাদেরকে অজ্ঞান হওয়ার ওষুধ মেশানো ডাবটি দেওয়া হয়। ডাব কিনে খাওয়ার পর অপর দুইজন সদস্য ক্রেতার অনুসরণ করে পিছু নেয়। ৫/৬ মিনিট পর ক্রেতা যখন গাড়িতে বা রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় তখন চক্রের দুজন সদস্য তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে অসুস্থ বলে তোলে নেয়। এরপর অজ্ঞান হওয়া ব্যক্তি থেকে টাকা, মোবাইলসহ সাথে থাকা মূল্যবান সব জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে চক্রের সদস্যরা কেটে পড়েন।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, সোমবার নতুন ব্রিজ এলাকায় মো. মামুনুর রশিদ নামে এক ফল বিক্রেতাকে অজ্ঞান করে তার কাছ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। পরে মামুনুর রশিদের পরিবার থানায় অভিযোগ করলে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরো বলেন, এ চক্রটি ২৪ আগস্ট কোতোয়ালী থানার নিউমার্কেট এলাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মেহেদী হাসান রকিকে অজ্ঞান করে তার কাছ থেকে মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়।

মেহেদী হাসান রকি বলেন, গত শনিবার (২৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিউমার্কেট মোড় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠি। এ সময় এক বৃদ্ধ লোক জানালার পাশে এসে তার কাছ থেকে ডাব কেনার অনুরোধ করেন। লোকটি বলে তার সব ডাব বিক্রি হয়ে গেছে। আর একটি ডাব আছে এবং নামাজের সময় হওয়ায় সে মসজিদে যাবে বলে খুব কাকুতি মিনতি করেন। বৃদ্ধ লোকটিকে দেখে খুব অসহায় মনে হলো। তাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও একটি ডাব কিনে খাই। পরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।

গ্রেফতার হওয়া অজ্ঞান পার্টির এক সদস্য জানান, তারা ঔষুধগুলো গুঁড়ো করে পানিতে মিশিয়ে ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মাধ্যমে ডাবের ভেতর প্রবেশ করান। ঔষুধ মিশ্রিত এসব পানি খেয়ে মানুষ ৬/৭ মিনিটের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে তারা টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান মালামাল হাতিয়ে নেয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফ, চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ রাইসু্ল ইসলাম, কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনসহ অভিযান পারিচালনাকারী টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম

আরও পড়ুন