২৯ অক্টোবর ২০২৫

এবারও আয়োজন নেই থার্টিফাস্ট'র

ডুবে গেলো প্রাপ্তির বছর ২০২৩ সালের শেষ সূর্য

সময় তখন ৫টা ২০ মিনিট। শীতল হওয়ায় চারপাশে কুয়াশাচ্ছন্ন। সমানে গর্জন দিচ্ছে ঢেউ। এরই মাঝে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেছে ২০২৩ সালের শেষ সূর্য। রেললাইন, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিকেএসপি কক্সবাজার কেন্দ্রসহ ২০২৩ পুরো বছরই কক্সবাজারের জন্য প্রাপ্তির। এরই মাঝে ২০৪১ সালের ভিশন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের স্বপ্ন জাগিয়ে কালের গহ্বরে হারিয়ে গেলো ২০২৩ সাল। প্রাপ্তি, হতাশা, ক্লান্তি ও নানা ঘটন-অঘটনকে চাপিয়ে শেষ হল আরো একটি বছর। এবারও থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনে দৃশ্যমান আয়োজন নেই। এরপরও কক্সবাজারে উল্লেখ করার মতো পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে। সেন্টমার্টিনেও অবস্থান করছেন অনেক পর্যটক। বছরের শেষ সূর্যাস্থ দেখতে সৈকতে হাজির হন পর্যটকের পাশাপাশি প্রকৃতি সচেতন স্থানীয় নারী-পুরুষ।

কনকনে শীতল হাওয়া থাকলেও বছরের শেষ দিনে সূর্য লাল আভা ছড়িয়ে বিদায় নিয়েছে। সোমবারের সূর্যোদয়ের মধ্যদিয়ে পথচলা শুরু হবে ২০২৪ খিষ্টাব্দের। ৩৬৫ দিনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে পরিচ্ছন্ন আগামীর প্রত্যাশায় ২০২৪ সালকে স্বাগত জানিয়েছে সবাই। উন্মুক্ত কোন আয়োজন না থাকলেও নিজেদের মতো করে নতুন বছরকে বরণ করেছে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ।

রাষ্ট্রীয় নির্দেশনায় ওপেন স্থানে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের সব ধরণের আয়োজন বন্ধ। তবে, অতীতের মতো তারকা হোটেলগুলো স্ব-উদ্যোগে হোটেলে অবস্থান করা অতিথিদের জন্য আভ্যন্তরিণ আয়োজন রেখেছে। বহিরাগতদের জন্য বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে সাশ্রয়ী দামে গালা ডিনারের আয়োজন করেছে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেড। একইধরনের আয়োজন রেখেছে সী পার্ল হোটেল এন্ড স্পাসহ আরো কয়েকটি তারকা হোটেল।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশন নেতা ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলে জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, মৌসুমের এ সময়টা পর্যটকরা বেরাতে কক্সবাজারকেই প্রাধান্যে রাখে। কক্সবাজার আসা পর্যটকদের ৭০-৭৫ শতাংশ এক থেকে দুদিনের ট্যুরে সেন্টমার্টিন যান। এবারও এই ধারা অব্যহত রয়েছে। ইংরেজি নতুন বছর ২০২৪-কে স্বাগত জানাতে পর্যটকের মিলন মেলা বসেছে। প্রায় হোটেলে ৮০-৮৫ শতাংশ বুকিং হয়েছে।

এদিকে, বাড়তি পর্যটক মাথায় রেখে সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ অন্য আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রেখেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলাম।

হোটেল-মোটেল জোনের মোহাম্মদীয়া গেস্ট হাউসের ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সময়ের মতো এবারও বছরের শেষ দিন সারাদেশ থেকে লোকজন কক্সবাজার সৈকতে এসেছে। অনুষ্ঠান না থাকলেও বিগত সময়ের মতো থার্টিফার্স্ট উদযাপনে সৈকতে অসংখ্য পর্যটক এবং স্থানীয়রাও উপস্থিত হয়েছে।

রবিবার বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা-লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বিপুল দর্শনার্থী এসেছেন সৈকতে। শীতের মাঝেও অনেকে গোসল করছিলেন সমুদ্রে। অধুকাংশই বালুচরে দাঁড়িয়ে সাগরের গর্জন আর সূর্যাস্ত উপভোগ করছেন।

কক্সবাজার সদর উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, পেশাগত কারণে পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারি না। তাই বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে পরিবারসহ সৈকতে এসেছি।

চাকুরীর সুবাদে কক্সবাজারে অবস্থান করায় বিগত বছরের ন্যায় এবারও বছরের শেষ সূর্যাস্থের স্বাক্ষী হতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বালিয়াড়িতে এসেছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা। ২০২৩ সালের বিদায়ী সূর্যাস্তের স্বাক্ষি হতে পারা উপভোগের বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, থার্টিফাস্ট উদযাপনে সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা অযুক্তিক। সবাই মিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থার্টিফাস্টের অনুষ্ঠান করা গেলে পর্যটনের বিভিন্ন সেক্টরে কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্য হতো।

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সৈকত কিংবা পর্যটন স্পটের কোথাও আতশবাজি, ফটকা ফোটানোসহ গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ব্যান্ডসংগীতের আয়োজন করা নিষেধ। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্র উপভোগে বাঁধা নেই। পর্যটন এলাকার নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, অনুষ্ঠান না থাকলেও পর্যটন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।

আরও পড়ুন